
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ‘স্পষ্টবাদী’।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নাহিদ ইসলাম নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্যেই উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এবং ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নামের দুটি সংগঠন একত্রিত হয়ে এই রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। আর এই নতুন দলের নেতৃত্বে থাকবেন নাহিদ ইসলাম। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে জানা গেছে।
গত কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল যে, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মোড় আনতে পারে। নাহিদ ইসলাম নিজেও বিভিন্ন সময় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি নতুন দলে যোগ দিতে উপদেষ্টার পদ ছাড়বেন। অবশেষে তার পদত্যাগের মাধ্যমে সে জল্পনা বাস্তবে পরিণত হলো।
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান বেশ নাটকীয়। কয়েক মাস আগেও তিনি ছিলেন তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত একজন তরুণ নেতা। কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
নাহিদ ইসলাম ১৯৯৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ‘ফাহিম’। তার বাবা একজন শিক্ষক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষে তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তার এক ছোট ভাই রয়েছে।
নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসেও তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত। তবে সে বছরের মাঝামাঝিতে এক অপহরণের ঘটনায় তিনি দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি দুবার আটক হন এবং অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি তৎকালীন সরকারের নির্যাতনের শিকার হন।
এরপর আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সে সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হন নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ এবং নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে দেশের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে, যেখানে পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নাহিদ ইসলামের নতুন দল কতটা প্রভাব ফেলবে এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, যখন আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির ঘোষণা আসবে।