৩০ ডিসেম্বর, কেনিয়ার মাকুয়েনি কাউন্টির মুকুকু গ্রামে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করেই আকাশ থেকে বিকট শব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ে ২ মিটার ব্যাসের একটি ধাতব বস্তু। প্রায় ৫০০ কেজি ওজনের বস্তুটি আংশিকভাবে পুড়ে ছিল। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সৌভাগ্যক্রমে, বস্তুটি কোনো বাড়ি বা মানুষের ওপর পড়েনি।

গ্রামবাসীরা এ ঘটনায় চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ভাবছেন, এটি হয়তো পৃথিবী ধ্বংসের ইঙ্গিত, আবার অনেকের ধারণা—এটি আকাশ থেকে পাঠানো কোনো রহস্যময় আশীর্বাদ।
ঘটনাস্থলটি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি এবং মোম্বাসা শহরের মাঝামাঝি এলাকায় হওয়ায় ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করলে বিষয়টি আরও আলোচিত হয়।
কেনিয়ার স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, এই ধাতব বস্তুটি সম্ভবত একটি রকেটের ‘সেপারেশন রিং’, যা রকেট উৎক্ষেপণের সময় ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এ ধরনের বস্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় পুরোপুরি পুড়ে যায় অথবা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, এমন অংশ ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে। স্পেস এজেন্সির একজন মুখপাত্র জানান, ‘‘আমাদের তদন্ত অনুযায়ী এটি একটি মহাকাশযানের অংশ, এবং এ ধরনের ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে।’’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘‘২০২২ সালে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলের একটি অংশ অস্ট্রেলিয়ার একটি ভেড়ার খামারে পড়েছিল। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, তবে এসব বস্তু সাধারণত জনবসতি এলাকায় পড়ে না।’’
ধাতব বস্তুটি পড়ার পরপরই কেনিয়ার স্পেস এজেন্সি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় সেটি উদ্ধার করে। বর্তমানে বস্তুটি স্পেস এজেন্সির হেফাজতে রয়েছে এবং এর পরিচয় নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ দল তদন্ত চালাচ্ছে। তারা বিশ্লেষণ করে দেখছে, এটি কোন রকেটের অংশ এবং এর উৎপত্তিস্থল কোথায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টুকোর কাছে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘আমরা যখন আমাদের দৈনন্দিন কাজ করছিলাম, তখন হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনি। ছুটে এসে দেখি, মাটিতে একটি বিশাল ধাতব বস্তু পড়ে রয়েছে। সেটি দেখে আমরা ভীষণ ভয় পেয়ে যাই।’’
আরেকজন গ্রামবাসী বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল এটি কোনো বড় বিস্ফোরণ। আতঙ্কে ভেবেছিলাম, হয়তো আজই পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে।’’ তৃতীয় আরেকজন বলেন, ‘‘যদি এটি কারও বাড়ির ওপর পড়ত, তাহলে হয়তো অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটত। আকাশে কি এমন কোনো সংস্থা রয়েছে যারা আমাদের ওপর এ ধরনের বস্তু ফেলছে?’’
এই ঘটনার পর কেনিয়ার বিভিন্ন মহল থেকে এমন প্রশ্ন উঠেছে যে, মহাকাশ সংস্থাগুলো কি এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এ ধরনের বর্জ্য পড়ার ঝুঁকি থাকলেও অধিকাংশ সময় তা সমুদ্রে পড়ে বলে বড় বিপর্যয় এড়ানো যায়। তবে জনবসতি এলাকায় এমন ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
কেনিয়ার স্পেস এজেন্সি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়।