
এক-দুই বছর নয়, পুরো ছয় বছর ধরে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়হীন ব্রাজিল। ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সফল দল হয়েও এই সময়ের মধ্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের জালে একবারও বল জড়াতে পারেনি পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এবার সেই হতাশাজনক অধ্যায়ের অবসান ঘটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্রাজিলের ইনফর্ম উইঙ্গার রাফিনিয়া।
আগামীকাল (২৬ মার্চ) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬:০০ টায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। এই হাইভোল্টেজ ম্যাচকে ঘিরে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছেন রাফিনিয়া। সতীর্থ ও সমর্থকদের উদ্দেশে এক জ্বালাময়ী ভাষণে তিনি জানিয়েছেন, এবার তারা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে জয়খরা কাটানোর জন্য মরিয়া। তার ভাষায়,
“আমরা তাদের অবশ্যই হারাব। গুঁড়িয়ে দেব—মাঠে এবং প্রয়োজন হলে মাঠের বাইরেও। নিশ্চিতভাবেই আমি গোল করতে যাচ্ছি। আমরা যা আছে সব উজাড় করে দেব।”
তবে কাজটি মোটেও সহজ হবে না ব্রাজিলের জন্য। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কতটা কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে সেলেসাওরা। ২০১৯ সালের পর থেকে দুই দল চারবার মুখোমুখি হয়েছে, যার মধ্যে তিনবারই পরাজিত হয়েছে ব্রাজিল, আর একবার ম্যাচ শেষ হয়েছে গোলশূন্য ড্রয়ে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিজেদের মাটিতেই আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হারে ব্রাজিল, যেখানে একমাত্র গোলটি করেছিলেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্ডি।
এই পরিসংখ্যান বদলাতেই এবার মরিয়া ব্রাজিল। দলের আক্রমণভাগে রয়েছেন রাফিনিয়া, ভিনিসিয়াস জুনিয়র এবং রদ্রিগোর মতো তারকারা, যারা ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলেই কেবল জয় পেতে পারে ব্রাজিল।
এই ম্যাচটি শুধু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের জন্য নয়, বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে আর্জেন্টিনার জন্যও। যদি স্কালোনির দল এই ম্যাচে অন্তত ড্র করতে পারে, তবে তারাই হবে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের প্রথম দল, যারা ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করবে। অর্থাৎ, ব্রাজিলের মাটিতেই তাদের বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার সুযোগ থাকছে আলবিসেলেস্তেদের সামনে। আর এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত নস্যাৎ করতেই মরিয়া ব্রাজিলের ফুটবলাররা।
একদিকে যখন রাফিনিয়ার মতো ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আগ্রাসী বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন ঠাণ্ডা মাথায় খেলাটি দেখছেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। প্রতিপক্ষের উসকানিমূলক মন্তব্যে একদমই পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। ম্যাচের আগে তিনি বলেন,
“মাঠে আমরা যোদ্ধা, আর মাঠের বাইরে বন্ধু। আমি খেলোয়াড়দের মন্তব্য নিয়ে খুব বেশি ভাবতে চাই না। আমি জানি এসব কথা বলা হয়েছে, তবে দিনশেষে এটা একটা ফুটবল ম্যাচ। এর বাইরে যাওয়া উচিত নয়।”
তার এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, ব্রাজিলের আগ্রাসন কৌশলের বিপরীতে আর্জেন্টিনা ঠাণ্ডা মাথায় খেলতে চায়। তারা মাঠের খেলায় ফোকাস রাখতে চায়, প্রতিপক্ষের কথার লড়াইয়ে নয়।
আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল—শুধু দুই দলের লড়াই নয়, ফুটবল বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা। লাতিন ফুটবলের দুই পরাশক্তির এই দ্বৈরথ বরাবরই অনন্য উত্তেজনার জন্ম দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
ব্রাজিল কি ছয় বছরের জয়খরা কাটিয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পাবে? নাকি আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠেই বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করবে? ফুটবল বিশ্ব অপেক্ষায়, রোমাঞ্চকর এক রাতের!