নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে যদি কেউ নববর্ষের শুভেচ্ছা পাঠায়, তা শুনে হয়তো অবাক হতে পারেন। তবে ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা খুব অদ্ভুত কিছু হবে না। মঙ্গল গ্রহে যদি মানুষের বসতি স্থাপন হয়, তাহলে নভেম্বর মাসের দিকে আমাদের অনেকেই মঙ্গলবাসী বন্ধু বা পরিচিতদের কাছ থেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা পেতে শুরু করবেন। যদিও সেই দিন এখনও বহু দূরে, এ বছরই মঙ্গল গ্রহে নতুন বছরের শুরু উপলক্ষে উৎসব পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং লাল গ্রহে থাকা রোভারগুলো।
মঙ্গল গ্রহের সৌর বছরের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সূর্যের চারপাশে একটি পূর্ণ প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করতে মঙ্গল গ্রহের সময় লাগে পৃথিবীর হিসেবে প্রায় ৬৮৭ দিন। এ কারণে মঙ্গল গ্রহে একটি বছর শেষ হতে আমাদের দুই বছর প্রায় কেটে যায়।
মঙ্গল গ্রহের সর্বশেষ নববর্ষ উদ্যাপন হয়েছিল ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর। সেই হিসেবে চলতি বছর ১৩ নভেম্বর মঙ্গল গ্রহে নতুন বছরের সূচনা হয়েছে। এই দিন থেকেই মঙ্গল গ্রহে নতুন সৌরচক্র শুরু হয়েছে। পৃথিবী থেকে দূর হলেও, মঙ্গল গ্রহের রোভারগুলো তাদের অনন্য পদ্ধতিতে এই নববর্ষ উদ্যাপন করেছে।
নাসার রোভার পার্সিভারেন্স, যা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করে, এবার নতুন বছর উপলক্ষে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। এতে রোভারটি লিখেছে, ‘শুভ মঙ্গল নববর্ষ! লাল গ্রহে সূর্যের চারপাশে এটি আমার দ্বিতীয় ভ্রমণ। আমি নতুন আরও কিছু অন্বেষণ ও আবিষ্কারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’ পার্সিভারেন্স বর্তমানে জেজেরো ক্রেটার নামের এক প্রাচীন হ্রদের অবশিষ্ট খাদে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। অতীতে মঙ্গল গ্রহে কোনো ধরনের প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা জানার জন্য বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করছে রোভারটি।
অন্যদিকে, ২০১২ সাল থেকে মঙ্গল গ্রহে অবস্থানরত আরেক রোভার কিউরিওসিটিও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। পৃথিবীতে পাঠানো এক বার্তায় রোভারটি লিখেছে, ‘শুভ মঙ্গল নববর্ষ!’ প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মঙ্গলের নানা ভূতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছে কিউরিওসিটি।
মঙ্গল গ্রহের ঋতুচক্র পৃথিবীর তুলনায় অনেক দীর্ঘ। এখানে প্রতিটি ঋতু প্রায় দ্বিগুণ সময় স্থায়ী হয়। মঙ্গলের শীতকাল বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং, কারণ এ সময় সূর্যের আলো খুবই কম থাকে। এতে রোভারের মতো সৌরশক্তি-নির্ভর যানগুলো কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। শীতকালীন এই সময় রোভারগুলোকে কার্যক্ষম রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
নতুন বছরের সূচনা মঙ্গলে এক ভিন্ন অনুভূতি নিয়ে আসে। যদিও মঙ্গল গ্রহে এখনও মানুষের বসবাসের স্বপ্ন বাস্তব হয়নি, রোভারগুলোর এই কাজ এবং বার্তা আমাদের বিজ্ঞান ও ভবিষ্যতের মহাকাশযাত্রার প্রতি নতুন করে আশা জাগায়। হয়তো একদিন আমরা নিজেরাই মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে নববর্ষের শুভেচ্ছা পাঠাব।
আরও পড়ুন
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধান: মহাকাশ বিজ্ঞানের অনন্ত গবেষণা
মহাকাশের গভীরে সাইকি: লেজার যোগাযোগে নতুন দিগন্ত