পৃথিবী ছাড়া মহাকাশে আর এমন কোনও গ্রহ কি আছে যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে? এই প্রশ্ন বহু যুগ ধরেই মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে নিরলস গবেষণার মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন।
এমন একটি গ্রহের সন্ধান চলছে, যেখানে প্রাণের বিকাশ সম্ভব হতে পারে কিংবা যেখানে প্রাণ ইতিমধ্যেই বিকশিত হয়েছে। পৃথিবীর আশপাশের পরিচিত গ্রহগুলিকে নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহু আগেই গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিন্তু এই গবেষণা এখানেই থেমে থাকেনি। মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন চলছে প্রতিনিয়ত।
প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে চিরকালীন প্রশ্ন
মহাকাশ বিজ্ঞানের জগতে একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন হল—পৃথিবীর বাইরে আর কোথাও কি প্রাণ রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষকরা লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহগুলোর দিকে নজর দিচ্ছেন। শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাই নয়, মহাকাশে আগ্রহী প্রতিটি মানুষের মনেও এই প্রশ্নের সাড়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেগে থাকে। পৃথিবী ছাড়া প্রাণের সম্ভাবনা থাকা একটি গ্রহ খুঁজে পাওয়া মানে মানবজাতির সামনে নতুন এক জগতের দ্বার খুলে দেওয়া।
মহাকাশ গবেষণায় নতুন আবিষ্কার
সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এমনই একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার করেছেন। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০০ আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহের সন্ধান মিলেছে, যা আকারে পৃথিবীর মতো এবং তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত শীতল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই আবিষ্কারটি করেছে ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির গবেষকরা। গ্রহটি একটি লাল বামন নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে এবং এটি পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ১.১ গুণ বড়।
পৃথিবীর অনুরূপ বৈশিষ্ট্য
স্পেস ডট কমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন আবিষ্কৃত এক্সোপ্ল্যানেটটি আকারে ছোট এবং শীতল। এটি এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত, যা নক্ষত্রের ‘হ্যাবিটেবল জোন’ বা বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এই হ্যাবিটেবল জোন এমন একটি এলাকা যেখানে তাপমাত্রা খুব বেশি নয়, আবার খুব কমও নয়। অর্থাৎ, তরল পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রাণের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্রহের তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডল এবং আকারের কারণে এটি পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য হতে পারে।
‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ’ নক্ষত্রের চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহ
ব্রিটিশ রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, এই এক্সোপ্ল্যানেটটি একটি ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ’ নক্ষত্রের চারপাশে আবর্তন করছে। এটি প্রথমবারের মতো এমন একটি ঘটনা যেখানে ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ’-এর ‘হ্যাবিটেবল জোন’-এ একটি গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গ্রহটি এমন একটি পরিবেশে রয়েছে, যা প্রাণের বিকাশের উপযোগী হতে পারে।
মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ
এ ধরনের আবিষ্কার শুধু মহাকাশ বিজ্ঞানকেই সমৃদ্ধ করছে না, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ সভ্যতার জন্য এক নতুন আশা জাগাচ্ছে। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধান শুধু বৈজ্ঞানিক কৌতূহল মেটানোর মাধ্যম নয়, বরং তা হতে পারে মানুষের টিকে থাকার নতুন বিকল্প। বিজ্ঞানীরা আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে মহাকাশের অজানা রহস্য উদঘাটনে এগিয়ে চলেছেন।
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধান এবং নতুন আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া মহাকাশ বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এই গ্রহের সন্ধান সেই লক্ষ্যের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। হয়তো একদিন আমরা জানব, মহাকাশের আরও কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে, এবং এই আবিষ্কার মানবজাতির অস্তিত্বের গল্প নতুন করে লিখবে।
আরও পড়ুন
সোসিয়েদাদের মাঠে দ্বিতীয়বার হারের স্বাদ পেলো বার্সেলোনা
ভিনিসিয়াসের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে রিয়ালের আক্রমণাত্মক জয়