
নিশ্চিতভাবেই ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ফেরার পথে বিশাল এক পদক্ষেপ নিয়েছে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে জার্মান জায়ান্ট বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে পাঁচবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচের নায়ক হয়ে উঠেছেন পোলিশ তারকা রবার্ট লেভান্ডোভস্কি, জোড়া গোল করেছেন এই অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড।
নতুন কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে ট্রেবল জয়ের স্বপ্নে বিভোর বার্সেলোনা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দেয়। ম্যাচের ২৫ মিনিটে রাফিনহার নেওয়া জোরালো শটে এগিয়ে যায় বার্সা। যদিও প্রথমার্ধে আরও কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল তারা, কিন্তু ডর্টমুন্ডের গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেলের দৃঢ় প্রতিরোধে ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
বিরতির পর যেন আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেয় কাতালানরা। দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র তিন মিনিটের মাথায় রাফিনহার পাস থেকে বল পেয়ে নিখুঁত শটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লেভান্ডোভস্কি। এরপর ৬৬ মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি। এই দুই গোল যেন সাবেক ক্লাবের প্রতি ব্যক্তিগত বার্তাই দিয়ে দিলেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার।
ম্যাচের ৭৭ মিনিটে ডর্টমুন্ডের রক্ষণভাগকে দারুণভাবে পরাস্ত করে দলের হয়ে চতুর্থ ও শেষ গোলটি করেন তরুণ স্প্যানিশ প্রতিভা লামিনে ইয়ামাল। ১৬ বছর বয়সেই নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে তিনি যেন ভবিষ্যতের বার্সা তারকা হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন।
এই জয়ের ফলে ২০১৯ সালের পর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বার্সেলোনা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এখন টানা ২৩ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে দলটি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতা বার্সা এবার সেই ইতিহাস পুনরাবৃত্তির স্বপ্নে মগ্ন।
ম্যাচ শেষে রবার্ট লেভান্ডোভস্কি বলেন, “এটা আমাদের জন্য বড় এক জয়। দল হিসেবে সবাই দুর্দান্ত খেলেছি। তবে এখনো কাজ শেষ হয়নি। সামনে আরও একটি ম্যাচ আছে। বার্সেলোনার ফুটবল মানেই দারুণ, আকর্ষণীয় ফুটবল—আমরা সেটাই খেলতে চাই, জার্মানিতেও।”
তবে অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিতে ভাসতে নারাজ কোচ হ্যান্সি ফ্লিক। তিনি বলেন, “ফুটবল একটা অদ্ভুত খেলা। আজ আমরা যেমন মনোযোগী ছিলাম, পরের লেগেও ঠিক তেমনই মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস জরুরি, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপদ ডেকে আনতে পারে।”
দ্বিতীয় লেগে হার এড়ালেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠে যাবে বার্সেলোনা। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকতে পারে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান কিংবা জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ—যাদের সঙ্গেও বার্সার রয়েছে রোমাঞ্চকর অতীত।
এখন প্রশ্ন, ফ্লিকের বার্সেলোনা কি পারবে আবার ইউরোপের সিংহাসনে ফিরে যেতে? উত্তর দেবে সময়, তবে এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম ভয়ংকর দল।