
বাংলাদেশ ও ভারতের ফুটবলপ্রেমীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে আজ। এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাইপর্বের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ভারতের শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য এই মহারণকে ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে। ম্যাচটি শুরু হবে আজ (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে।
চার বছরেরও বেশি সময় পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। এই ম্যাচকে ঘিরে দুই দেশের ফুটবল মহলে উত্তেজনার পারদ চূড়ান্ত পর্যায়ে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ দলের জন্য এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। কারণ, এই ম্যাচেই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নামবেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগজয়ী মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। তার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ দলের শক্তি বাড়িয়েছে বহুগুণ।
অন্যদিকে, ভারতের জন্য বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন। ভারতের অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকার ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন, যা তাদের আক্রমণভাগকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে।
বাংলাদেশ ও ভারত রয়েছে ‘সি’ গ্রুপে, যেখানে আরও দুটি দল হলো হংকং ও সিঙ্গাপুর। ডাবল লিগ পদ্ধতিতে এই গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। আসন্ন এশিয়ান কাপ অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবে, যেখানে অংশ নেবে ২৪টি দল। ফলে, আজকের ম্যাচটি দুই দলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দলই তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ভারতের সাম্প্রতিক ফর্ম বেশ ভালো। তারা মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে। তবে, বাংলাদেশেরও পরিকল্পনা রয়েছে নতুন চমক দেখানোর।
বাংলাদেশ কোচ বলেছেন,
“আমাদের খেলোয়াড়রা আত্মবিশ্বাসী ও অনুপ্রাণিত। হামজার অন্তর্ভুক্তি আমাদের মিডফিল্ডকে শক্তিশালী করেছে। আমরা ভারতের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে চাই।”
অপরদিকে, ভারতীয় কোচ মনে করছেন,
“সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। আমরা বাংলাদেশের শক্তি ও নতুন কৌশল সম্পর্কে জানি, তাই পরিকল্পনামাফিক খেলতে হবে।”
বাংলাদেশ শিবির থেকে অভিযোগ উঠেছে, পর্যাপ্ত সুবিধা না পাওয়ার বিষয়ে। যদিও ভারতীয় দল এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ফুটবলের ইতিহাসে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। দুই দল এখন পর্যন্ত ৩১ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে,
- ভারত জিতেছে ১৬টি ম্যাচ
- বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ৩টি ম্যাচে
- ১২টি ম্যাচ ড্র হয়েছে
দুই দেশের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমসে, যেখানে ভারত ৩-০ গোলে জয় পেয়েছিল।
বাংলাদেশের সর্বশেষ জয় এসেছিল ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে, যেখানে অতিরিক্ত সময়ের গোলে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করেছিল লাল-সবুজের দল। তবে, সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০২১ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে, যেখানে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল।
এই উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস। এছাড়া, টি-স্পোর্টসের অ্যাপে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে দর্শকরা মোবাইল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ম্যাচটি উপভোগ করতে পারবেন।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ আজ নতুন পরিকল্পনায় মাঠে নামতে পারে। সম্ভাব্য একাদশ হতে পারে—
গোলরক্ষক: আনিসুর রহমান জিকো
ডিফেন্ডার: রহমত মিয়া, তপু বর্মন, বিশ্বনাথ ঘোষ, সোহেল রানা
মিডফিল্ডার: হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা
ফরোয়ার্ড: রবিউল হাসান, মতিন মিয়া, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম
হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের রক্ষণ ও মাঝমাঠকে আরও শক্তিশালী করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের মূল ভরসা সুনীল ছেত্রী। এছাড়া লালিয়ানজুয়ালা চাঙতে, সাহাল সামাদ ও সন্দেশ ঝিঙ্গান থাকবেন নজরকাড়া ভূমিকায়।
ভারত শক্তিশালী দল হলেও, বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে হামজা চৌধুরীর অভিষেক বাংলাদেশের খেলার ধরন পরিবর্তন করতে পারে। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হলে আজ জয় তুলে নেওয়া জরুরি।
ফুটবলপ্রেমীরা অপেক্ষায় আছেন এক রোমাঞ্চকর ম্যাচের জন্য। বাংলাদেশ কি পারবে ইতিহাস বদলাতে? নাকি ভারত আবারও তাদের আধিপত্য বজায় রাখবে?
সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ সন্ধ্যা ৭:৩০ টায়, জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে!