
লা লিগার শিরোপা দৌড়ে উত্তেজনার পারদ আরও চড়ল। রিয়াল বেতিসের কাছে হেরে গিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ যখন ধাক্কা খেল, তখন শীর্ষে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ পেল বার্সেলোনা। আর সেই সুযোগ একদম নিখুঁতভাবে কাজে লাগিয়ে দাপুটে এক জয় তুলে নিল কাতালানরা। আনোয়েতায় মৌসুমের প্রথম ভাগে রিয়াল সোসিয়েদাদের কাছে পরাজিত হওয়ার দুঃস্মৃতি ভুলে, এবার তাদেরই ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিল হ্যান্সি ফ্লিকের দল।
বার্সেলোনার জন্য ম্যাচটি সহজ করে দিয়েছিল রিয়াল সোসিয়েদাদ নিজেই। শুরু থেকেই ম্যাচে লড়াই করছিল তারা, এমনকি অফসাইডের কারণে একটি গোলও বাতিল হয়। কিন্তু ১৫ মিনিটের মাথায় তাদের ডিফেন্ডার আরিতজ এলুস্তোন্দো লাল কার্ড দেখলে সব হিসাব-নিকাশ বদলে যায়। দশজনের দলে পরিণত হওয়া সোসিয়েদাদের জন্য এরপর আর ম্যাচে ফেরার কোনো সুযোগই ছিল না। বার্সেলোনা সেটিকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে একের পর এক আক্রমণ শানায় এবং গোল উৎসবে মাতে।
এই জয়ে লিগ টেবিলের চিত্রও বদলে গেছে। আগের দিন অ্যাথলেতিক বিলবাওকে হারিয়ে শীর্ষে উঠেছিল অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, তবে বার্সেলোনা তাদেরও পেছনে ফেলেছে। ২৬ ম্যাচ শেষে ১৮ জয় ও তিন ড্রয়ে বার্সেলোনার সংগ্রহ ৫৭ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে অ্যাতলেতিকোর পয়েন্ট ৫৬, আর রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৫৪।
এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে বার্সেলোনা একটি বড় ধাক্কা খায় লা লিগার সূচি পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে। তাদের ম্যাচটি শনিবারের পরিবর্তে রোববার নির্ধারণ করায় দলটিকে বিশ্রামের কম সময় পায়, কারণ সামনে রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেনফিকার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। তবে হ্যান্সি ফ্লিক যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেন। কোপা দেল রে সেমিফাইনালে খেলা আলেহান্দ্রো বালদে, ইনিয়োগো মার্তিনেজ এবং ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ংকে বিশ্রামে রাখেন, যদিও ডি ইয়ং শেষ দিকে মাঠে নামেন। অপরদিকে, রবার্ট লেভানদোভস্কি কোপার ম্যাচে বিশ্রামের পর এই ম্যাচে একাদশে ফেরেন।
ম্যাচটি শুরু হয় ঠান্ডা আবহাওয়ায়, স্থানীয় সময় বিকেল ৪:১৫ মিনিটে। সাধারণত এমন সময়ে বার্সেলোনার জন্য ম্যাচ কঠিন হয়ে থাকে। তবে আজকের ম্যাচটি ছিল ব্যতিক্রম, বিশেষ করে তরুণ প্রতিভাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে।
লাল কার্ড দেখার আগে সোসিয়েদাদ প্রথম দিকে বেশ ভালো খেলছিল এবং একটি গোলও করেছিল, যা অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। তবে এলুস্তোন্দোর লাল কার্ডের পর বার্সেলোনার জন্য পথ সহজ হয়ে যায়। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কাতালানরা, আর একে একে গোলের দেখা পেতে থাকে।
প্রথম গোল আসে তরুণ ফুটবলার জেরার্ড মার্তিনের পা থেকে। লামিন ইয়ামাল অসাধারণ ড্রিবলিং করে প্রতিপক্ষের একজনকে কাটিয়ে মার্তিনকে পাস বাড়ান, আর মার্তিন সহজেই বল জালে পাঠিয়ে দেন। এটি ছিল বার্সেলোনার জার্সিতে তার প্রথম গোল।
এরপর দানি ওলমোর নেওয়া একটি দূরপাল্লার শট কাসাদোর গায়ে লেগে গোলপোস্টে ঢুকে যায়, যা বার্সার দ্বিতীয় গোল হিসেবে পরিগণিত হয়। এই গোলটিও ছিল কাসাদোর জন্য বিশেষ, কারণ এটি ছিল তার প্রথম গোল।
দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনা আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। লামিন ইয়ামাল দারুণ পারফরম্যান্স করতে থাকেন, আর পেদ্রি একাধিকবার গোলের সুযোগ তৈরি করেন। একবার তার নেওয়া দুর্দান্ত শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
বার্সেলোনার তৃতীয় গোলটি আসে রোনালদ আরাহোর হেড থেকে। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল প্রথমে লেভানদোভস্কির শট প্রতিহত হলে, সেটি ধরে হেডে গোল করেন আরাহো। কিছুক্ষণ পর লেভানদোভস্কিও নিজের নাম স্কোরশিটে তোলেন। দূরপাল্লা থেকে নেওয়া তার শট একজন ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে জড়িয়ে যায়, যা ছিল বার্সেলোনার চতুর্থ ও শেষ গোল।
এই জয়ের মাধ্যমে বার্সেলোনা শুধু লিগের শীর্ষে উঠল না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেল। সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেনফিকার বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, তবে এই দাপুটে পারফরম্যান্স দলটির মনোবল বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।