অভিষেক ম্যাচেই ম্যাচসেরা হামজা চৌধুরী লেস্টার সিটিতে নিয়মিত খেলার সুযোগ না পেলেও শেফিল্ড ইউনাইটেডের জন্য হামজা চৌধুরী ছিলেন একপ্রকার প্রতীক্ষিত নাম। ক্লাবটির কোচ ক্রিস ওয়াইল্ডার বহু আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি হামজার ভক্ত এবং তার মতো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে দলে চাইছেন। তাই চলতি শীতকালীন দলবদলে তাকে ধারে নিয়ে আসতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি শেফিল্ড ইউনাইটেড। নতুন ঠিকানায় পা রাখার পর প্রথম ম্যাচেই কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংলিশ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী।

শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে তার অভিষেক হয় ডার্বি কাউন্টির বিপক্ষে, যেখানে তিনি নিজের প্রিয় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশনে খেলেন। মাঠে নামার পর থেকেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন ২৬ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। রক্ষণে চৌকস ভূমিকা, বল কভারেজ, ট্যাকল এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করে শেফিল্ড ইউনাইটেডের রক্ষণের মূল স্তম্ভ হয়ে ওঠেন হামজা। যদিও তিনি গোল বা অ্যাসিস্ট করতে পারেননি, তবে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সই তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে।
ডার্বির বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছিল দুই দল। তবে রক্ষণ সামলানোর ক্ষেত্রে হামজার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ম্যাচের ৩০তম মিনিটে ডার্বি মিডফিল্ডার ডেভিড ওজোর নেওয়া জোরালো শট দুর্দান্তভাবে ব্লক করেন তিনি, যা গোলের সম্ভাবনাকে রুখে দেয়। শুধু রক্ষণ সামলানোই নয়, আক্রমণ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ডিপ-লাইয়িং মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিপক্ষের ফাইনাল থার্ডে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পাস দেন, যা থেকে শেফিল্ডের ফরোয়ার্ডরা গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন।
তার ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান ছিল যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক—
- ৮টি গ্রাউন্ড ডুয়েল জিতেছেন, যা মাঠে উপস্থিত প্রতিটি খেলোয়াড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
- ৩টি সফল ড্রিবল, যা দেখিয়ে দেয় তার বল নিয়ন্ত্রণ ও এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য।
- ৩ বার বল রিকোভারি করেছেন এবং ২ বার ইন্টারসেপশন করে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেস্তে দিয়েছেন।
- ৭৯% সফল পাসিং রেট, যা তাকে দলের অন্যতম সেরা পাসমেকার হিসেবে প্রমাণ করেছে।
শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে অভিষেকেই এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স হামজার সামর্থ্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। কোচ ওয়াইল্ডার তার পারফরম্যান্সে খুশি এবং ভবিষ্যতে দলে তার আরও বড় ভূমিকা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই ম্যাচে শেফিল্ড ইউনাইটেড জয় পেয়েছে ব্রেরেটন দিয়াজের একমাত্র গোলে। তবে রক্ষণে হামজার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই তাদের জয়ের অন্যতম বড় কারণ।
এই জয়ের সুবাদে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে শেফিল্ড ইউনাইটেড আরও মজবুত অবস্থানে চলে গেছে। ৩০ ম্যাচ শেষে তাদের সংগ্রহ ৬১ পয়েন্ট, যা সরাসরি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রমোশন পাওয়ার দৌড়ে তাদেরকে ভালো অবস্থানে রাখছে। শীর্ষে থাকা লিডস ইউনাইটেডের পয়েন্ট ৬৩, আর তিনে থাকা বার্নলির সংগ্রহ ৫৮ পয়েন্ট।
শেফিল্ড ইউনাইটেডের যদি ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তবে আগামী মৌসুমে তাদেরকে আবারও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দেখা যেতে পারে। আর এই দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেলে হামজা চৌধুরী আরও বড় তারকায় পরিণত হবেন, সেটি বলাই যায়।