
আর্সেনালের ঐতিহ্যবাহী ঘরের মাঠ এমিরাটস স্টেডিয়াম শনিবার রাত ১০টায় পরিণত হতে যাচ্ছে এক রঙিন ফুটবল উৎসবে। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এবং আফ্রিকার অন্যতম শক্তিশালী দল সেনেগাল।
দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০২৩ সালের জুনে লিসবনে, যেখানে অবিশ্বাস্যভাবে ব্রাজিলকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্ব ফুটবলে আলোড়ন তুলেছিল সেনেগাল। সেই হার ভুলে নতুন অধ্যায় রচনায় এবার ব্রাজিল মাঠে নামছে প্রতিশোধের মিশন নিয়ে।
ইতালিয়ান কিংবদন্তি কোচ কার্লো অ্যানচেলোত্তি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্রাজিল এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে হাঁটছে। তার অধীনে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে সেলেসাওয়ের ফল—
৩ জয়, ১ ড্র, ২ হার, এবং চারটি ম্যাচে ক্লিন শিট।
ব্রাজিলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এত দুর্বল পারফরম্যান্স দেখা গেছে।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে তাদের রেকর্ড—
👉 ৮ জয়, ৪ ড্র, ৬ হার
অধিকাংশ ব্যর্থতাই এসেছে সাবেক কোচ ডরিভাল জুনিয়রের সময়ে। বাছাইপর্ব শেষ হয়েছিল বলিভিয়ার বিরুদ্ধে ১-০ গোলের লজ্জাজনক হার দিয়ে।
১০ দলের মধ্যে ব্রাজিলের অবস্থান ছিল পঞ্চম, আর শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনার থেকে তারা ছিল ১০ পয়েন্ট দূরে।
সম্প্রতি এশিয়া সফরে ব্রাজিল দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিলেও জাপানের কাছে ৩-২ গোলে হেরে বসে; প্রথমার্ধে ২-০ এগিয়ে থেকেও হারটা সমর্থকদের হতাশ করেছে।
অ্যানচেলোত্তির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—আফ্রিকান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ইতিহাস বদলানো।
ব্রাজিল এর আগে সেনেগালের বিপক্ষে দুই ম্যাচে
➡️ ১ ড্র
➡️ ১ হার
সেলেসাও এবার প্রথম জয়ের জন্য মরিয়া।
আফ্রিকার ফরমোস্ট জায়ান্ট সেনেগাল বর্তমানে দুর্দান্ত ছন্দে।
সর্বশেষ ম্যাচে মৌরিতানিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়ে তারা ২০২৬ বিশ্বকাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোয়ালিফাই করা শেষ আফ্রিকান দল হিসেবে জায়গা করে নেয়।
গ্রুপ বি-তে তাদের রেকর্ড—
- ৭ জয়, ৩ ড্র
- গোল করেছে ২২টি, খেয়েছে মাত্র ৩টি!
পাপ থিয়াওয়ের সফলতার গল্প
২০২৪ সালের ডিসেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পর কোচ পাপ থিয়াও যেন জাদু ছড়াচ্ছেন।
তার অধীনে দলটির রেকর্ড—
১০ জয়, ২ ড্র
সাফল্যের হার ৮৩.৩%!
শেষ চার ম্যাচে তাদের গোল ব্যবধান—
➡️ ১৪-২, যা তাদের ভয়ংকর ফর্মের প্রমাণ।
সেনেগাল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় দলের বিরুদ্ধে দারুণ খেলে আসছে।
ইউরোপে ইংল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে তারা আবারও বিশ্বকে দেখিয়েছে নিজেদের শক্তি।
নেইমার জাতীয় দলে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে খেলছেন না। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলেও অ্যানচেলোত্তির ২৬ সদস্যের স্কোয়াডে তাকে রাখা হয়নি। বাদ পড়েছেন ইনজুরিতে গোলরক্ষক হুগো সুজাওও।
এছাড়া রাফিনহা, মার্টিনেলি, জোয়াও গোমেস, জোয়েলিনটনের মতো পরিচিত মুখদের বাইরে রেখেছেন কোচ।
অ্যানচেলোত্তি জানিয়েছেন—
ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে বাম উইং থেকে টেনে নিয়ে কেন্দ্রে খেলানো হবে, যা পুরো আক্রমণ সাজানোর রূপ বদলে দিতে পারে।
তার সঙ্গে জোয়াও পেদ্রো, রিচার্লিসন বা কুনহার কেউ থাকবেন।
১৮ বছরের বিস্ময়-তরুণ এস্তেভাও জাতীয় দলে জায়গা পাকা করতে লড়ছেন—গত নয় ম্যাচে তিন গোল তার সামর্থ্যের প্রমাণ।
ইনজুরিতে ক্রপিন দিয়েত্তা বাদ পড়েছেন। নামপালিস মেন্ডি, মামাদু এমবো ও শেখ নিসেকেও রাখা হয়নি।
তবে সুসংবাদ হলো—
🔸 আসানে দিয়াও ফিরেছেন চোট কাটিয়ে
🔸 লে হ্যাভরের মিডফিল্ডার রাসুল এনদিয়ায়ে ফিরেছেন ১৮ মাস পর
এছাড়া ফুটবলবিশ্ব নজর রাখবে দুই তরুণ সেনেগালি তারকার অভিষেকের দিকে—
- মামাদু সার
- ১৭ বছর বয়সী উইঙ্গার ইব্রাহিম এমবাপে
এবং অবশ্যই আছেন দলের প্রাণভোমরা সাদিও মানে, যিনি ২০২৩ সালের ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে করেছিলেন দুই গোল।
তার সঙ্গে আক্রমণে থাকবেন জ্যাকসন, ইলিম্যান এনদিয়ায়ে ও ইসমাইলা সার।
ব্রাজিলের সম্ভাব্য একাদশ
এডারসন; ওয়েসলি, মার্কুইনহোস, গ্যাব্রিয়েল, সি. হেনরিক; ক্যাসেমিরো, গুইমারেস; এস্তেভাও, পাকুয়েতা, রডরিগো; ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
সেনেগালের সম্ভাব্য একাদশ
ই. মেন্ডি; এ. মেন্ডি, কৌলিবালি, নিয়াকতে, দিউফ; পি. সার, গেয়ে; আই. সার, এনদিয়ায়ে, মানে; জ্যাকসন।
















