
দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই মানেই চরম উত্তেজনা। শতাব্দীপ্রাচীন এই দ্বৈরথ কেবল একটি ম্যাচ নয়; এটি গর্ব, ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বাদশ রাউন্ডের পর পয়েন্ট তালিকায় কিছুটা রদবদল হলেও, এই মহারণের গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োসও মনে করেন, সুপারক্লাসিকো কখনোই কেবল আরেকটি সাধারণ ম্যাচ হতে পারে না—এটি সবসময়ই এক ফাইনালের মতো।
দ্বাদশ রাউন্ড শেষে ব্রাজিলের অবস্থান ছিল শঙ্কাপূর্ণ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোল হজম করে ছয়ে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী রাউন্ডেই দারুণ পারফর্ম করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বর্তমানে ১৩ ম্যাচ শেষে তাদের সংগ্রহ ২১ পয়েন্ট, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা একুয়েডরের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম। শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনার সংগ্রহ ২৮ পয়েন্ট, যারা একক আধিপত্য ধরে রেখেছে।
তবে পয়েন্ট টেবিলে উন্নতি হলেও ব্রাজিলের জন্য সুপারক্লাসিকোর গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি। কোচ দরিভাল জুনিয়রের অধীনে দল পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এবং এই ম্যাচটি তাদের জন্য উন্নতির ধারাবাহিকতা প্রমাণের আদর্শ মঞ্চ হতে চলেছে।
ব্রাসিলিয়ায় রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পিএসজি ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োস তুলে ধরেন সুপারক্লাসিকোর তাৎপর্য। তার মতে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ কখনোই কেবল একটি বাছাইপর্বের খেলা হতে পারে না, এটি সবসময়ই এক মহারণ, এক ফাইনালের আবহ নিয়ে আসে।
“আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ কখনও সাধারণ ম্যাচের মতো হয় না। এটা কখনোই কেবল আরেকটি বাছাইপর্বের খেলা নয়, বরং যে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালের মতো। আমাদের জন্য এটি অনেক বড় একটি ক্লাসিক লড়াই। সেই মানসিকতা, সেই অনুপ্রেরণা এবং সেই প্রাণশক্তি নিয়েই আমরা মাঠে নামব।”
তিনি আরও বলেন, এই ম্যাচ শুধুমাত্র তিন পয়েন্টের লড়াই নয়, বরং ব্রাজিল দলের উন্নতি ও স্থিতিশীলতা প্রদর্শনেরও সুযোগ।
“আমরা এই ধরনের ম্যাচ খেলতে ভালোবাসি। এই ম্যাচগুলোর জন্য অনুপ্রাণিত হওয়া সহজ, কারণ এগুলোতে শুধু জয় নয়, আত্মবিশ্বাসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করা, নিজেদের সেরাটা তুলে ধরা এবং বড় মঞ্চে ভালো পারফর্ম করা।”
ব্রাজিলের জার্সিতে প্রায় এক যুগ পার করতে চলেছেন মার্কিনিয়োস। ২০১২ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ৯৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে বহুবার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছেন এবং প্রতিবারই নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
তার মতে, সুপারক্লাসিকো শুধুমাত্র একটি ম্যাচ নয়, এটি এক ঐতিহাসিক লড়াই।
“ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথের মাহাত্ম্য অনেক গভীর, এর ইতিহাস সুদীর্ঘ। মাঠে নামলেই বোঝা যায়, প্রতিটি মুহূর্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বলের জন্য দুই দল লড়াই করে। এটা শুধু ফুটবলের খেলা নয়, বরং গর্বের লড়াই।”
তিনি স্বীকার করেন, বর্তমান সময়ে দুই দল ভিন্ন বাস্তবতায় রয়েছে। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা এখনো দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে, অন্যদিকে ব্রাজিল পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতিটি ম্যাচেই দল আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং খেলোয়াড়দের বোঝাপড়াও বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে মাঠে গড়াবে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা দ্বৈরথ, ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। একদিকে, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে চায়, অন্যদিকে, ব্রাজিল নতুন করে নিজেদের প্রমাণের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।
সুপারক্লাসিকো কখনোই শুধুমাত্র একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, এটি লাতিন আমেরিকার ফুটবল সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। মাঠে ৯০ মিনিটের লড়াই শেষে জয়ী যেই হোক, বিশ্বজুড়ে কোটি ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়ে এই ম্যাচ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।