
টাইব্রেকারের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ফ্রান্স জয় ছিনিয়ে নিল ক্রোয়েশিয়ার কাছ থেকে। বিশ্বকাপ ফাইনালের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো ফরাসিরা এবারও শঙ্কায় পড়েছিল প্রথম শটে ব্যর্থ হয়ে। তবে পোস্টে আস্থার প্রতীক হয়ে থাকা গোলরক্ষক মাইক মিয়াঁ দেখালেন জাদু। ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় শট নেওয়া ইওসিপ স্তানিসিচের শট ঠেকিয়ে দিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দায়দ উপামেকানোর শট নিশ্চিত করে দিল ফ্রান্সের নেশন্স লিগ সেমিফাইনালের টিকিট।
রোববার রাতে ঘরের মাঠে শুরু থেকেই আক্রমণের ঢেউ তুলেছিল ফ্রান্স। ৯০ মিনিট শেষে ২-০ গোলে জয় পেলেও প্রথম লেগে সমান ব্যবধানে হেরে থাকায় মোট স্কোর দাঁড়ায় ২-২। অতিরিক্ত সময়ে কোনো দলই গোল করতে পারেনি, যার ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
ফ্রান্সের পক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান মাইকেল ওলিসে ও উসমান দেম্বেলে। এমবাপের ব্যর্থতার রাতে ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ এক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ওলিসে। পরে দেম্বেলের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়।
পুরো ম্যাচে ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন। ম্যাচের শুরুতেই, ১৫তম মিনিটে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে নেওয়া শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
২৪তম মিনিটে দেম্বেলের ক্রস থেকে বল পেলেও একটুর জন্য ঠিকঠাক সংযোগ ঘটাতে পারেননি। ৭৫তম মিনিটে আরেকটি দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েও ডি-বক্সের ভেতর থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন রিয়াল মাদ্রিদের নতুন তারকা। অতিরিক্ত সময়েও একাধিকবার সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে, তবে গোলরক্ষক লিভাকোভিচের অসাধারণ সেভগুলো তাকে হতাশ করে।
প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর ৫২তম মিনিটে দারুণ ফ্রি কিক থেকে গোল করেন মাইকেল ওলিসে। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া তার নিখুঁত শট ক্রোয়াট গোলরক্ষক লিভাকোভিচের নাগালের বাইরে চলে যায়।
৬১তম মিনিটে চুয়ামেনির হেড লক্ষ্যে থাকলে আরও আগে ব্যবধান বাড়াতে পারত ফ্রান্স। তবে ৭৯তম মিনিটে অবশেষে আসে কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় গোল। ওলিসের কাটব্যাক থেকে বল পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করেন দেম্বেলে।
শেষ দিকে এমবাপে ও দিজিরে দুয়ের শট দুর্দান্তভাবে প্রতিহত করেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক। বিশেষ করে ৯৫তম ও ১০৮তম মিনিটে একাধিক ‘ওয়ান-অন-ওয়ান’ সুযোগ পেয়েও এমবাপে লিভাকোভিচকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন।
৯ মিনিট পর আরেকটি শট দুর্দান্তভাবে আটকে দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক, ম্যাচ নিয়ে যান টাইব্রেকারে।
পেনাল্টি শুটআউটে প্রথম শটে ব্যর্থ হন থিও এরনঁদেজ, এতে বিশ্বকাপ ফাইনালের দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়ে ফরাসি সমর্থকদের। তবে তাদের স্বস্তি দেন গোলরক্ষক মাইক মিয়াঁ।
ক্রোয়েশিয়ার প্রথম তিন শটের মধ্যে দুইটি আটকে দেন তিনি। মার্তিন বাতুরিনার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান, ফ্রানিয়ো ইভানোভিচের জোরালো শট যায় বাইরে।
ফ্রান্সের প্রথম দুটি শটে গোল করেন এমবাপে ও চুয়ামেনি, যদিও লিভাকোভিচ দুটিতেই হাত ছোঁয়ালেও ঠেকাতে পারেননি। এরপর জুল কুন্দের শট বাইরে চলে গেলে ম্যাচ জমে ওঠে।
রান্দাল কোলো মুয়ানি গোল করলে ফ্রান্স জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়, তবে থিও এরনঁদেজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
ফ্রান্সের বিদায় তখন কেবল এক শট দূরে। কিন্তু দুয়ের শট ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিহত করেন মিয়াঁ। এরপর নিজের শটে গোল করে দলকে সেমিফাইনালে তুলে দেন দায়দ উপামেকানো।
ফ্রান্স ম্যাচজুড়ে দাপট দেখিয়েছে। ১২০ মিনিটে বল দখলে রেখেছে ৬২ শতাংশ সময়, গোলের জন্য নিয়েছে ২৮টি শট, যার মধ্যে ৮টি লক্ষ্যে ছিল। বিপরীতে, পুরো ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি।
তবে টাইব্রেকারের নাটকীয়তা শেষে ফ্রান্সই হাসল শেষ হাসি, নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলো দুর্দান্ত এক লড়াইয়ের পর।