
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের চ্যালেঞ্জিং লড়াইয়ে সাম্প্রতিক সময়ে লাতিন আমেরিকার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি কলম্বিয়ার বিপক্ষে সুবিধা করতে পারছিল না ব্রাজিল। শেষ দুই দেখায় জয়বঞ্চিত ছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা—একটি করে হার ও ড্র। একইসঙ্গে বাছাইপর্বের পয়েন্ট তালিকায়ও দলটি কঠিন সময় পার করছিল। ইনজুরি জর্জরিত স্কোয়াড নিয়ে মাঠে নামতে হওয়ায় শঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছিল। তবে সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে নাটকীয় এক ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে কলম্বিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জন করেছে সেলেসাওরা।
রোমাঞ্চে ভরা ম্যাচের সূচনা
শুক্রবার ভোরে ব্রাসিলিয়ার বিআরবি মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল ও কলম্বিয়া। দুই দলই দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলে পরাশক্তি, ফলে শুরুর আগেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ম্যাচের প্রথম থেকেই দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে।
শুরুর দশ মিনিটেই কলম্বিয়ার রক্ষণে চাপ তৈরি করে ব্রাজিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় স্বাগতিকরা। কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার দানিয়েল মুনোজ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে ডি-বক্সে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে গোল করেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া, যিনি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। এ নিয়ে ব্রাজিলের হয়ে টানা চার ম্যাচে চতুর্থ গোল করলেন তিনি।
এরপরও গোলের সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। রদ্রিগোর নেওয়া শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। তবে ৪১ মিনিটে ব্রাজিলের ভুলেই সমতায় ফেরে কলম্বিয়া। মাঝমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোয়েলিন্টন। কলম্বিয়ান তারকা হামেস রদ্রিগেজ দ্রুত বল বাড়িয়ে দেন লুইস দিয়াজের উদ্দেশে। লিভারপুল ফরোয়ার্ড ডি-বক্সের মধ্যে বল পেয়ে নিখুঁত শটে ব্রাজিলের জালে বল পাঠান।
চোট-আঘাতে বিপর্যস্ত ব্রাজিল
এই ম্যাচের আগেই ইনজুরির কারণে নেইমার, এডারসন, দানিলোদের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের হারিয়েছিল ব্রাজিল। এরপর ম্যাচ চলাকালীন আরও বড় ধাক্কা আসে। ২৭ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মিডফিল্ডার গারসন। এছাড়া ১৪ মিনিটে কলম্বিয়ার আক্রমণ রুখতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন ব্রুনো গুইমারেস, যা তাকে পরবর্তী ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিষিদ্ধ করে দেয়।
বিরতির পরও ম্যাচে উত্তেজনার কমতি ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে দু’দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ব্রাজিল একাধিকবার আক্রমণ শানালেও কলম্বিয়ান গোলরক্ষক কামিলো ভার্গাস দৃঢ়তার সঙ্গে গোলবার আগলে রাখেন।
৬৩ মিনিটে কলম্বিয়া গোলের উদযাপন শুরু করেছিল, তবে তার আগেই গোলরক্ষক অ্যালিসনকে ফাউল করায় রেফারি সেটি বাতিল করেন। তবে ৭১ মিনিটে ব্রাজিলের জন্য আরও বড় ধাক্কা আসে। কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার সানচেজের সঙ্গে সংঘর্ষে মাথায় আঘাত পান অ্যালিসন। ফলে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়, গোলবারের দায়িত্ব নিতে মাঠে নামেন তরুণ গোলরক্ষক ম্যাথিয়াস বেন্তো।
ভিনিসিয়ুসের ম্যাজিক মুহূর্ত
খেলা যখন অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়, তখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটি হয়তো ড্রয়ের দিকেই এগোচ্ছে। তবে ৯০+৯ মিনিটে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার দুর্দান্ত আড়াআড়ি শট কলম্বিয়ান গোলরক্ষক ভার্গাসের নাগালের বাইরে চলে যায় এবং বল জালে জড়িয়ে যায়। মুহূর্তেই গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে উল্লাসে মাতে ব্রাজিল সমর্থকরা।
ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোল করানো এবং শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করা ভিনিসিয়ুস ছিলেন ম্যাচের নায়ক।
পয়েন্ট তালিকায় ব্রাজিলের উন্নতি
এই জয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পয়েন্ট তালিকায় বড় পরিবর্তন এসেছে। ১৩ ম্যাচ শেষে ২১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্রাজিল। সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে নেমে গেছে কলম্বিয়া। শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা, যাদের ১২ ম্যাচে সংগ্রহ ২৫ পয়েন্ট। উরুগুয়ে সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ জয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে ব্রাজিল। তবে সামনে তাদের অপেক্ষা করছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ—প্রতিপক্ষ লাতিন চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ইনজুরি ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্রাজিলের শক্তি কিছুটা কমবে, তবে আত্মবিশ্বাসী ভিনিসিয়ুস-রাফিনিয়ারা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।