
স্নায়ুচাপের লড়াইয়ে আবারও ব্যর্থ হলেন অ্যালিসন বেকার। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হয়েও পেনাল্টি শ্যুটআউটে আরেকবার দলকে হতাশ হতে দেখলেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড অব সিক্সটিনের দ্বিতীয় লেগে পিএসজির বিপক্ষে লিভারপুলের স্বপ্নভঙ্গ হলো টাইব্রেকারে, যেখানে মূল পার্থক্য গড়ে দিলেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা।
অ্যানফিল্ডে ১২০ মিনিটের লড়াই শেষে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ১-১। নির্ধারিত সময়ে এবং অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল গোলের দেখা না পাওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই লিভারপুলের পরাজয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাখেন ডারউইন নুনেস ও কার্টিস জোন্স, যারা দুজনই নিজেদের স্পট কিক মিস করেন। আর প্রতিটি শটে দৃঢ়তা দেখিয়ে ৪-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় পিএসজি।
লিভারপুলের বিদায়ের দিনে অ্যালিসন বেকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে গড়েছেন এক অনন্য রেকর্ড। দুই লেগ মিলিয়ে তিনি মোট ১৬টি শট প্রতিহত করেছেন, যা ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে নকআউট পর্বের ম্যাচে (পেনাল্টি শ্যুটআউট বাদে) যৌথ সর্বোচ্চ।
এই রেকর্ডের ভাগীদার আরেকজন কিংবদন্তি গোলরক্ষক—বায়ার্ন মিউনিখের ম্যানুয়েল নয়্যার। ২০১৬-১৭ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে তিনিও ১৬টি শট ফিরিয়েছিলেন। এবার সেই কীর্তির পাশে নিজের নাম বসালেন অ্যালিসন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে নয়্যারের মতো অ্যালিসনও দলকে পরবর্তী রাউন্ডে নিতে পারেননি।
পুরো ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন অ্যালিসন, তবে টাইব্রেকারে সব আলো কেড়ে নেন জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। পিএসজির হয়ে স্পট কিক নিতে আসেন ভিতিনিয়া, গনসালো রামোস, ওসমান দেম্বেলে ও দিসায়ার দুয়ে—চারজনই নিশ্চিত করেন গোল।
অন্যদিকে, লিভারপুলের পক্ষে প্রথম শটটি গোল করেন মোহামেদ সালাহ। কিন্তু দ্বিতীয় শটে ব্যর্থ হন দারউইন নুনেস, যার শট দুর্দান্ত দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুম্মা। এরপর কার্টিস জোন্সও গোল করতে ব্যর্থ হলে লিভারপুলের বিপদ আরও বাড়ে। পিএসজির গোলরক্ষকের অনবদ্য পারফরম্যান্সের সামনে একেবারে অসহায় মনে হচ্ছিল লিভারপুলকে।
চারটি সফল পেনাল্টি নিয়ে ৪-১ ব্যবধানে টাইব্রেকারে জয় নিশ্চিত করে পিএসজি। ম্যাচ শেষে লুইস এনরিকের শিষ্যদের উল্লাসে ফেটে পড়ে অ্যানফিল্ড, আর হতাশায় ডুবে যান অ্যালিসন ও তার সতীর্থরা।
গ্রুপ পর্বে দারুণ ধারাবাহিক ছিল লিভারপুল। প্রাথমিক পর্বের প্রথম সাতটি ম্যাচ জিতে সবার আগে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিয়েছিল তারা। অনেকেই মনে করেছিলেন, এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে তারা শিরোপার অন্যতম দাবিদার হতে পারে। কিন্তু নকআউট পর্বের প্রথম ধাপেই স্বপ্নভঙ্গ হলো আর্নে স্লটের দলের।
অন্যদিকে, পিএসজির জন্য গল্পটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। গ্রুপ পর্বের শুরুতে টানা ব্যর্থতায় একসময় তাদের পরবর্তী রাউন্ডে ওঠাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ ষোলোতে লিভারপুলের মতো শক্তিশালী দলকে বিদায় করে দিল তারা।
অ্যানফিল্ডের বুকে টাইব্রেকারে জয় তুলে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। এবার দেখার বিষয়, ফরাসি জায়ান্টরা এই দারুণ ফর্ম ধরে রেখে কতদূর যেতে পারে। শিরোপা কি অবশেষে ধরা দেবে লুইস এনরিকের দলের হাতে? উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।