
ম্যাচের আগের প্রেস কনফারেন্সে পেপ গার্দিওলাকে একটি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল— কোন লিভারপুল বেশি কঠিন প্রতিপক্ষ, ইউর্গেন ক্লপের নাকি আর্নে স্লটের? তবে কৌশলী গার্দিওলা সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে তিনি হয়তো নিজেই উপলব্ধি করেছেন, ক্লপের লিভারপুলকে থামানোর কিছু না কিছু উপায় ছিল, কিন্তু স্লটের লিভারপুলের বিরুদ্ধে তিনি যেন সম্পূর্ণ অসহায়!
গতকাল লিভারপুল পেরিয়ে গেল তাদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগুলোর একটি। ঘরের মাঠে ২-০ ব্যবধানে জয়ের পর এবার ম্যানচেস্টার সিটিকে তাদের নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে একই ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপার পথে আরও দৃঢ় এক পদক্ষেপ নিল তারা। এই জয়টি লিভারপুলের জন্য আরও ঐতিহাসিক হয়ে থাকল, কারণ ২০১৫ সালের নভেম্বরের পর প্রিমিয়ার লিগে ইতিহাদে এটি তাদের প্রথম জয়। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতিমধ্যে তারা এই মাঠে জয় পেয়েছে, তবে লিগে এই জয়ের মূল্য অনেক বেশি।
প্রথমার্ধের শুরু থেকেই দুই দল আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে, তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল লিভারপুলের হাতে। ১৪তম মিনিটে মোহাম্মদ সালাহর গোলেই এগিয়ে যায় লিভারপুল। কর্নার থেকে আসা বল ডমিনিক সবোস্লাই ব্যাকহিলে সালাহর জন্য সেট আপ করেন, আর মিশরীয় তারকা নিখুঁত এক ফিনিশিংয়ে গোলটি করেন। এই গোলটি ছিল চলতি মৌসুমে সালাহর ২৫তম লিগ গোল।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে লিভারপুল তাদের দ্বিতীয় গোলের দেখা পায়। এবার গোলদাতা ডমিনিক সবোস্লাই, কিন্তু গোলের মূল কারিগর সালাহই। ডি-বক্সে বল পেয়ে নিখুঁত এক পাসে হাঙ্গেরিয়ান মিডফিল্ডারকে বল দেন সালাহ, যিনি ঠান্ডা মাথায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। এই গোলের পর পুরো ইতিহাদ স্টেডিয়ামে যেন হতাশার ছায়া নেমে আসে।
৫৬তম মিনিটে লিভারপুল তাদের তৃতীয়বারের মতো বল জালে পাঠায়, কিন্তু সেটি বাতিল হয় ভিএআর রিভিউয়ে। কার্টিস জোন্স গোল করলেও, তার আগে সবোস্লাই অফসাইডে ছিলেন বলে সিদ্ধান্ত নেয় রেফারি।
উল্টো দিকে ম্যানচেস্টার সিটিও গোলের সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্যও সঙ্গ ছাড়েনি। ৩০তম মিনিটে একটি গোল বাতিল হয় এবং আরেকবার লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার অসাধারণ সেভ করে গোল বঞ্চিত করেন স্বাগতিকদের। গার্দিওলার দল বারবার আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়, লিভারপুলের জমাট রক্ষণভাগ আর দ্রুতগতির পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা।
এই জয়ের ফলে ২৭ ম্যাচ শেষে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও শক্ত করল লিভারপুল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের (৫৩ পয়েন্ট) সঙ্গে তাদের ব্যবধান এখন ১১ পয়েন্ট। অন্যদিকে, এক ম্যাচ কম খেলে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি।
এই জয়ের মাধ্যমে আর্নে স্লটের লিভারপুল নিজেদের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করল। অন্যদিকে, গার্দিওলার সিটির জন্য এই হার শিরোপা দৌড়ে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ালো। সামনে কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই মুহূর্তে, লিভারপুলের জয়যাত্রা থামানোর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না গার্দিওলা!