৫ ফেব্রুয়ারি: ফুটবলের মহাতারকাদের জন্মদিন উৎসব!
ফুটবলের ইতিহাসে ৫ ফেব্রুয়ারি যেন এক সোনালি দিন। এই দিনে জন্মেছেন একাধিক কিংবদন্তি, যারা তাদের দক্ষতা, নেতৃত্ব ও সাফল্য দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ভক্তদের জন্য এটি শুধুই একটি জন্মদিনের তালিকা নয়, বরং প্রিয় তারকাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এক বিশেষ উপলক্ষ।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমার, কার্লোস তেভেজ—তিনজনই বর্তমান প্রজন্মের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। তবে শুধু তারা নন, আজকের দিনেই জন্ম নিয়েছেন ইতালির কিংবদন্তি ডিফেন্ডার ও কোচ সিজারে মালদিনি, রোমানিয়ার সর্বকালের সেরা ফুটবলার গিওর্গি হ্যাজি এবং বিশ্ববিখ্যাত কোচ সভেন গোরান এরিকসন। একসঙ্গে এত ফুটবল মহারথীর জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ পাওয়া সত্যিই দুর্লভ।
রোনালদো: ফুটবলের অবিসংবাদিত নায়ক
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো—একটি নাম, একটি ব্র্যান্ড, এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্তুগালের মাদেইরাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অসাধারণ দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা এবং জয়ের ক্ষুধা তাকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার বানিয়েছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস এবং আল-নাসরের জার্সিতে তিনি অগণিত শিরোপা ও রেকর্ড গড়েছেন। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী এই তারকা ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের একজন। তার একক প্রতিভা ও পরিশ্রমের গল্প শুধু ফুটবলপ্রেমীদের নয়, পুরো বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণা।

নেইমার: ব্রাজিলিয়ান জাদুকর
১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলের সাও পাওলোতে জন্ম নেন নেইমার জুনিয়র। পেলের উত্তরসূরি হিসেবে ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে প্রতিভার ঝলক দেখা গেছে। সান্তোসের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করে বার্সেলোনায় তিনি মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে গড়েছেন ভয়ংকর এক আক্রমণত্রয়ী। এরপর পিএসজিতে রেকর্ড ট্রান্সফারে পা রাখেন তিনি। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ গোলদাতার মুকুট পরেছেন নেইমার। চোটের কারণে ক্যারিয়ারে বাধা এলেও তার প্রতিভা অস্বীকার করা অসম্ভব। তিনি বর্তমানে তার শৈশবের ক্লাব সন্তোষে রয়েছে।

কার্লোস তেভেজ: সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি
আর্জেন্টিনার রাস্তা থেকে উঠে এসে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী স্ট্রাইকারে পরিণত হওয়ার গল্প কার্লোস তেভেজের। ১৯৮৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া তেভেজের ফুটবল জীবন ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। বোকা জুনিয়র্স থেকে শুরু করে ওয়েস্ট হ্যাম, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি ও জুভেন্টাসের মতো বড় ক্লাব মাতিয়েছেন তিনি। তার গতি, শারীরিক শক্তি ও গোল করার দক্ষতা তাকে ফুটবলে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার হয়ে ২০০৪ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয় করা তেভেজ ছিলেন মাঠের অক্লান্ত যোদ্ধা।
সিজারে মালদিনি: মিলান রাজবংশের জনক
আজকের তারকাদের মাঝে আছেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার সিজারে মালদিনি। ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার ছিলেন এসি মিলানের প্রতীক। ১৯৬৩ সালে ক্লাবকে প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ এনে দেওয়া দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তার কঠোর রক্ষণভাগের দক্ষতা মিলানকে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর কাতারে নিয়ে যায়।
খেলোয়াড় হিসেবে যেমন সাফল্য পেয়েছেন, কোচ হিসেবেও তেমন সফল ছিলেন সিজারে মালদিনি। এসি মিলান, ইতালি জাতীয় দলসহ বিভিন্ন দলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সন্তান পাওলো মালদিনিও মিলানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হয়ে উঠেছেন, যা মালদিনি পরিবারের ফুটবল ঐতিহ্যকে আরও গৌরবান্বিত করেছে।
গিওর্গি হ্যাজি: রোমানিয়ার ম্যারাডোনা
রোমানিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নাম গিওর্গি হ্যাজি। ১৯৬৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া হ্যাজি ছিলেন আশি ও নব্বইয়ের দশকের অন্যতম সেরা প্লেমেকার। তার পায়ের কাজ, ড্রিবলিং এবং দুর্দান্ত ফ্রি-কিকের জন্য তাকে “কার্পেথিয়ানসের ম্যারাডোনা” বলা হতো। স্টুয়া বুখারেস্ট, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মতো ক্লাবে খেলেছেন তিনি।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে রোমানিয়ার ঐতিহাসিক কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানোর পেছনে তার বিশাল ভূমিকা ছিল। পরে কোচ হিসেবে দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করেছেন এবং আজও রোমানিয়ার ফুটবলে তার প্রভাব অটুট।
সভেন গোরান এরিকসন: সুইডিশ ফুটবলের দ্য আইসম্যান
এই মহাতারকাদের মধ্যে জন্মেছেন এক কিংবদন্তি কোচও— সভেন গোরান এরিকসন। ১৯৪৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সুইডেনে জন্ম নেওয়া এরিকসনের ফুটবলার ক্যারিয়ার ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু কোচিং ক্যারিয়ারে তিনি ইতিহাস গড়েছেন। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের প্রথম বিদেশি কোচ, যিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
কোচ হিসেবে এরিকসন সুইডেন, পর্তুগাল ও ইতালিতে লিগ ও কাপের ডাবল জেতার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ক্লাব ফুটবলে তিনি লাজিওকে সিরি আ শিরোপা এনে দিয়েছেন এবং বেনফিকা ও রোমার মতো দলকেও শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন।
ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বিশেষ দিন
৫ ফেব্রুয়ারি যেন ফুটবলের এক মহোৎসব। এই দিনে জন্ম নেওয়া খেলোয়াড় ও কোচরা নিজেদের কর্মগুণে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। রোনালদো, নেইমার ও তেভেজের গতি ও গোল করার দক্ষতা যেমন ভক্তদের আনন্দ দেয়, তেমনি মালদিনির প্রতিরক্ষা, হ্যাজির প্লেমেকিং আর এরিকসনের কোচিং ফুটবলের সৌন্দর্যকে আরও বিস্তৃত করেছে।
বিশ্ব ফুটবলের এই মহাতারকাদের জন্মদিনে ফুটবলপ্রেমীদের একটাই চাওয়া—তাদের মতো আরও অনেক কিংবদন্তি ফুটবলার আসুক, ফুটবল আরও নতুন নতুন ইতিহাস রচনার সাক্ষী হোক!