“আমি মেজর ডালিম বলছি” বইটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি রচিত হয়েছে মেজর শরিফুল হক ডালিমের ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত এবং গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো স্থান পেয়েছে। বইটির প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে মেজর ডালিমের নিজের কথা, যার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, এবং পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
মেজর শরিফুল হক ডালিম একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা, যিনি মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য “বীর উত্তম” খেতাবে ভূষিত হন। কিন্তু তার সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত ভূমিকা হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা। তিনি এই ঘটনার অন্যতম মূল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং সেই সময় বাংলাদেশের রেডিওতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক দায়িত্বে থাকলেও পরে তার খেতাব বাতিল করা হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

বইয়ের মূল বিষয়বস্তু:
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ: মেজর ডালিম পাকিস্তানে অবস্থান করলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন এবং সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তার সাহসী এবং বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হন। কিন্তু তার জীবন ও ক্যারিয়ার বিশেষভাবে আলোচিত হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকাণ্ড। মেজর ডালিম সেই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তার দলীয় সহকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় এবং কেন তারা বঙ্গবন্ধুকে সরানোর প্রয়োজন বোধ করেছিল, তা বইতে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তারা বিশ্বাস করতেন, শেখ মুজিবের শাসন চরম স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছিল।
পরবর্তী জীবন ও দেশত্যাগ: বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে, মেজর ডালিম বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক পদে নিয়োগ পান। বইতে তিনি তার এই পর্বের জীবনের কথা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। সেই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং তার ভূমিকা বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উঠে এসেছে।
বইটির গুরুত্ব:
“আমি মেজর ডালিম বলছি” একটি স্মৃতিকথা হলেও, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর অধ্যায়কে নিয়ে আলোচনা করে। বিশেষত, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক উত্থান-পতন নিয়ে বইটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি শুধু লেখকের জীবনের ঘটনা বর্ণনা নয়, বরং সেই সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটকে বোঝার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
বইটি পাঠকদের সামনে ১৯৭৫ সালের ঘটনাবলীর একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে এবং লেখকের নিজের মতামত, চিন্তাধারা এবং নিজের ভূমিকাকে তুলে ধরে, যা রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গবেষণার জন্য মূল্যবান।