
নিশ্চিতভাবেই ম্যাচের আগে অনুমান করা হয়েছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ রিয়াল মাদ্রিদের সামনে সাদামাটা আর্সেনালের খুব একটা সুযোগ থাকবে না। কিন্তু লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর মাঠে যে চিত্র ফুটে উঠলো, তা ফুটবলবিশ্বকে বিস্মিত করেছে। রীতিমতো দাপটের সঙ্গে খেলেছে আর্সেনাল। রিয়াল মাদ্রিদকে এমনভাবে কোণঠাসা করে দিয়েছে যে, বিশ্বের অন্যতম সফল ক্লাবটিকেও মনে হচ্ছিল দিশেহারা এক দল।
চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্সেনাল। এই জয়ে লন্ডনের ক্লাবটি শুধু আধিপত্যই দেখায়নি, বরং ইউরোপিয়ান ফুটবলের মঞ্চে নিজেদের সামর্থ্যের এক নিখুঁত প্রদর্শনী উপহার দিয়েছে।
রাইসের ঝলকে ইতিহাসের পাতায় আর্সেনাল
৫৮ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ ছিল গোলশূন্য। এরপরই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ডেকলান রাইস। এক অসাধারণ বাঁকানো ও নিচু ফ্রি-কিক শটে রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে পরাস্ত করে আর্সেনালকে এগিয়ে দেন তিনি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ক্লাব ক্যারিয়ারে এটিই ছিল রাইসের প্রথম ফ্রি-কিক গোল।
রাইস থামেননি। ৭০ মিনিটে আরও একটি ফ্রি-কিক থেকে চমকপ্রদ গোল করেন তিনি। এবার তাঁর শট সরাসরি গিয়ে জড়ায় গোলবারের টপ কর্নারে। রিয়ালের রক্ষণভাগ এবং গোলরক্ষক পুরোপুরি হতবাক হয়ে যান রাইসের নিখুঁত এই প্রচেষ্টায়। এই গোলের মধ্য দিয়ে রাইস চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে নকআউট পর্বে এক ম্যাচে ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি দুটি গোল করা প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখান।
মেরিনোর গোল এবং ট্রোসারের ভূমিকা
৭৫ মিনিটে তৃতীয় গোলটি করেন আর্সেনালের মিকেল মেরিনো। বদলি খেলোয়াড় লিয়ান্দ্রো ট্রোসারের পাস পেয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান এই মিডফিল্ডার। পুরো ম্যাচজুড়ে আর্সেনালের খেলোয়াড়রা রিয়ালের রক্ষণভাগে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে গেছেন।
কর্তোয়ার দেয়াল আর রিয়ালের হতাশা
রিয়ালের হয়ে গোলবারে একমাত্র স্বস্তির নাম ছিলেন থিবো কর্তোয়া। একের পর এক শট রুখে দিয়ে দলের বড় হারের ব্যবধানকে কিছুটা হলেও কমিয়ে আনেন তিনি। না হলে ৩-০ নয়, জয়টি আরও বড় হতে পারতো গানারদের।
রিয়ালের জন্য হতাশা এখানেই শেষ হয়নি। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে বল দূরে মেরে দেয়ায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ডের শিকার হন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। ফলে ফিরতি লেগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গুরুত্বপূর্ণ এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে ছাড়াই খেলতে হবে রিয়ালকে।
ফিরতি লেগে কঠিন চ্যালেঞ্জে রিয়াল
এখন দুই লেগ মিলিয়ে জয়ী দল জায়গা করে নেবে সেমিফাইনালে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে অ্যাস্টন ভিলা অথবা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। তবে রিয়ালের জন্য সামনে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ঘরের মাঠে সেই ব্যবধান ঘোচানো সহজ হবে না—বিশেষ করে আর্সেনালের মতো আত্মবিশ্বাসী দলের বিপক্ষে।
এই ম্যাচে আর্সেনাল শুধু জয় নয়, বরং এক শক্ত বার্তা দিয়েছে ইউরোপীয় ফুটবল অঙ্গনে—তারা এসেছে লড়তে, জয় পেতে, এবং ইতিহাস লিখতে।