বার্সেলোনা দারুণ ফর্মে রয়েছে, আর তারই ধারাবাহিকতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে তারা। বেনফিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে ৩-১ গোলের জয় তুলে নিয়েছে হান্সি ফ্লিকের দল, দুই লেগ মিলিয়ে মোট ৪-১ ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে এগিয়ে গেছে কাতালানরা।
মঙ্গলবার রাতে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচে মূল আকর্ষণ ছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া ও স্প্যানিশ তরুণ প্রতিভা লামিনে ইয়ামাল। দুজনই গোল পেয়েছেন, পাশাপাশি একে অপরের গোলেও রেখেছেন সরাসরি অবদান। বিশেষ করে, ইয়ামালের চোখ ধাঁধানো গোলটি ছিল ম্যাচের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।
পুরো ম্যাচেই বার্সেলোনা ছিল আধিপত্য বিস্তারকারী দল। তারা ৬৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ২০টি শট নেয়, যার মধ্যে ৬টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, বেনফিকা প্রথমার্ধে মাত্র একটি শট নিতে পারে এবং পুরো ম্যাচে মাত্র ৮টি শট নেয়, যার ২টি লক্ষ্যে ছিল।
ম্যাচের শুরুতেই বার্সেলোনা আক্রমণে যায়। ১০ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি আসে রবের্ত লেভানদোভস্কির পায়ে, তবে তার শট অনায়াসে ঠেকিয়ে দেন বেনফিকা গোলরক্ষক আনাতোলি ত্রুবিন।
পরের মিনিটেই আসে কাঙ্ক্ষিত গোল। ডান প্রান্ত থেকে লামিনে ইয়ামালের দুর্দান্ত ক্রসে বক্সের ভেতর থেকে দারুণ এক ভলিতে বল জালে জড়িয়ে দেন রাফিনিয়া।
তবে বার্সেলোনার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৩তম মিনিটে কর্নার থেকে নিকোলাস ওতামেন্দি হেডে গোল করে বেনফিকাকে সমতায় ফেরান। গোলরক্ষক ভয়চেক স্ট্যান্সনি বল ঠেকানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০১৭ সালের পর এই প্রথম গোল পেলেন ৩৭ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার।
২৭তম মিনিটে আবার লিড নেয় বার্সেলোনা, এবার গোলদাতা লামিনে ইয়ামাল। রাফিনিয়ার ক্রস ধরে ডান দিকে একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দুর্দান্ত বাঁকানো শটে বল জালে পাঠান ১৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়েও বল ধরতে পারেননি। এই গোলের মাধ্যমে ইয়ামাল চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে একই ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের কীর্তি গড়লেন।
৪২তম মিনিটে রাফিনিয়া তার দ্বিতীয় গোল করেন, যা বার্সেলোনাকে আরও স্বস্তি এনে দেয়। নিজেদের অর্ধ থেকে ডিফেন্ডার আলেহান্দ্রো বাল্দে বল ধরে এগিয়ে গিয়ে দারুণ এক পাস বাড়ান বক্সে। সেখানে বাঁ পায়ের কোনাকুনি নিচু শটে বল জালে জড়ান রাফিনিয়া।
এই গোলের মাধ্যমে চলতি চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০ ম্যাচে রাফিনিয়ার গোলসংখ্যা হলো ১১। পাশাপাশি তিনি ৫টি অ্যাসিস্টও করেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের এক আসরে কোনো ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়েছেন তিনি, যা এর আগে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে রিভালদো ও ২০১৪-১৫ মৌসুমে নেইমারের ছিল (১০ গোল)।
বার্সেলোনার হয়ে এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে রাফিনিয়ার চেয়ে বেশি গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন শুধু একজন—লিওনেল মেসি। ২০১১-১২ মৌসুমে তিনি ১৪ গোল ও ৫ অ্যাসিস্ট করেছিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধেও বার্সেলোনা আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে। ৬৫তম মিনিটে দুর্দান্ত এক সুযোগ মিস করেন ফ্রেংকি ডি ইয়ং। সতীর্থের পাসে তিনি দারুণভাবে বক্সে ঢুকলেও, স্লাইড করে গোল করতে ব্যর্থ হন।
৬৬তম মিনিটে বেনফিকা তাদের দ্বিতীয় শট নেয়, যা সহজেই রুখে দেন স্ট্যান্সনি।
৭০তম মিনিটে বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক কিছু পরিবর্তন আনেন। লেভানদোভস্কি ও দানি ওলমোকে তুলে মাঠে নামানো হয় ফেররান তোরেস ও গাভিকে। খানিক পর তোরেস একটি ফ্রি-কিক নেন, তবে সেটি লক্ষ্যে থাকেনি।
শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা এবং নিশ্চিত করে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট।
এই ম্যাচের আগেও বার্সেলোনা শিবিরে ছিল শোকের আবহ। গত শনিবার ওসাসুনার বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচের আগে টিম হোটেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ক্লাবের চিকিৎসক কার্লেস মিনারো গার্সিয়া। সেই কারণে ম্যাচটি শুরু হওয়ার ২০ মিনিট আগে স্থগিত করা হয়েছিল।
প্রিয় চিকিৎসকের স্মরণে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ জিততে চেয়েছিলেন বার্সেলোনা কোচ ও খেলোয়াড়রা। শেষ পর্যন্ত তারা কথা রেখেছেন। এই জয়ের মাধ্যমে প্রয়াত চিকিৎসকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করল কাতালান ক্লাবটি।
সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বার্সেলোনা মুখোমুখি হবে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড অথবা লিলের। চ্যাম্পিয়নস লিগের পাঁচবারের বিজয়ী দলটি এবারও কি শিরোপার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে? সময়ই দেবে তার উত্তর!
লা লিগার শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকতে প্রতিটি ম্যাচেই এখন যুদ্ধ করতে হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদকে। প্রতিটি…
নিশ্চিতভাবেই ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ফেরার পথে বিশাল এক পদক্ষেপ নিয়েছে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের…
বিশ্বজুড়ে যখন ফিলিস্তিন সংকট মানবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তখন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা জেলা থেকে উঠে এলো…
নিশ্চিতভাবেই ম্যাচের আগে অনুমান করা হয়েছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ রিয়াল মাদ্রিদের…
ফিফা র্যাংকিংয়ের পার্থক্য বিশাল—ভারত ১২৬, বাংলাদেশ ১৮৫। শক্তির বিচারে ফেভারিট ভারত, তাছাড়া খেলা ছিল ভারতেরই…
এক-দুই বছর নয়, পুরো ছয় বছর ধরে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়হীন ব্রাজিল। ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সফল…