
শিশুরা ফুলের মতো, নিষ্পাপ আর কোমল। তারা ছোট্ট ছোট্ট আনন্দে মেতে থাকে, ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন দেখে। কিন্তু কিছু পশুর মতো মানুষের জন্য তাদের সেই নিষ্পাপ জীবনে নেমে আসে দুঃস্বপ্নের ছায়া।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সেই নিষ্ঠুরতারই চিত্র তুলে ধরে। মাত্র ১০ বছর বয়সী এক হাফেজি পড়ুয়া কন্যাশিশু বুঝতে পারেনি, বরই খেতে যাওয়া তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে।
ঘটনাটি ঘটে ৫ মার্চ, দুপুরের দিকে। প্রতিবেশী এনছান মৃধার নাতনীর সঙ্গে প্রায়ই খেলতে যেত ছোট্ট মেয়েটি। সেদিনও গিয়েছিল, নিছক বরই খাওয়ার আনন্দে। বৃদ্ধ এনছান মৃধা তাকে লোভ দেখাল, বলল, বেশি বরই দেবে। শিশুটি বিশ্বাস করল।
এটাই তো শিশুর স্বভাব—বিশ্বাস করা।
কিন্তু যে মানুষটা তার দাদার বয়সী, সেই মানুষটাই যখন রাক্ষস হয়ে ওঠে, তখন শিশুটির পক্ষে আর কিছুই করার থাকে না। বৃদ্ধ তাকে উঠানের একপাশে নিয়ে যায়, জড়িয়ে ধরে।
তার নিষ্পাপ শরীরে ভয়ংকর হাতের স্পর্শ পড়ে। শিশুটি হতভম্ব হয়ে যায়। কিছু বোঝার আগেই সে অনুভব করে, তার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে এক ভয়ংকর হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সে কাঁদতে থাকে, ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত প্রাণপণে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে আসে বাড়িতে।
মেয়েটি সব খুলে বলে মাকে। কিন্তু মায়ের বিশ্বাস হতে চায় না। আমাদের সমাজে মেয়েদের কথা সবসময় বিশ্বাস করা হয় না, বিশেষ করে শিশুদের কথা। মায়েরও তাই হলো।
কিন্তু শিশুটির শরীর নীরব সাক্ষ্য দিচ্ছিল। তার আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা ছিল, তাই মা রাতে তার শরীরে মলম লাগাতে গিয়ে দেখলেন, মেয়েটির বাম পাশের বুক ফুলে আছে।
শুধু তখনই তিনি বোঝেন, তার ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে কী ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে।
পরদিন থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। পুলিশ দ্রুত গ্রেপ্তার করে বৃদ্ধ এনছান মৃধাকে। কিন্তু শিশুটি কি তার আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে?
সে কি পারবে আবার স্বাভাবিক হতে?
মেয়েটির মা বলেন, “আমি কখনো কল্পনাও করিনি, আমার মেয়ের সঙ্গে এমন কিছু ঘটতে পারে। আমি ওই বৃদ্ধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কোনো শিশুর জীবন এভাবে কলুষিত না হয়।”
শুধু আইনি শাস্তি দিলেই কি এই ভয়াবহতা বন্ধ হবে? শিশুটির দুঃস্বপ্ন কি মুছে যাবে?
আমাদের সমাজে এখনো শিশুদের কথা গুরুত্ব সহকারে শোনা হয় না। তাদের কান্না, তাদের ভয় আমরা অবহেলা করি। একদিকে আমরা শিশুদের নিরাপত্তার কথা বলি, অন্যদিকে আমরা তাদের কথা শুনতে চাই না।
শিশুটি যদি প্রথমেই বিশ্বাস পেত, তাহলে হয়তো বিচার আরও দ্রুত হতো।
এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদের চারপাশে কত ভয়ংকর মানুষ লুকিয়ে আছে। যারা শিশুর সরলতাকে ব্যবহার করে, তাদের জীবনকে নরকে পরিণত করে।
শুধু এনছান মৃধার গ্রেপ্তার যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন, শিশুদের কথা শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা।
প্রয়োজন শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী।
একটি ১০ বছরের মেয়ে, যার জীবন এখনো ভালো করে শুরুই হয়নি, সে যেন আবার স্বপ্ন দেখতে পারে, এই সমাজের সবার কাছে সেটাই প্রার্থনা।