
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে এক রকম অসম লড়াই জিতল বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের মাঠে শুরু থেকেই বেনফিকার দুর্দান্ত আক্রমণ, এরপর ম্যাচের ২২তম মিনিটেই দশজনের দলে পরিণত হওয়া—সবকিছুই ছিল কাতালানদের বিপক্ষে। তবুও একঝাঁক তরুণ আর অভিজ্ঞদের অসাধারণ দলীয় প্রচেষ্টায় জয় ছিনিয়ে আনল হান্সি ফ্লিকের দল।
সাম্প্রতিক সময়ের সেরা ফর্মে থাকা রাফিনিয়ার একমাত্র গোলে বুধবার রাতে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় বার্সেলোনা। একই সঙ্গে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড গড়লেন আরও এক অনন্য মাইলফলক—এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তার এটি ২৫তম গোল। তবে বার্সেলোনার এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখতে হয়েছে দলটির গোলরক্ষক স্ট্যান্সনিকে। দুর্দান্ত সব সেভ করে তিনি হয়ে উঠেছেন রাতের নায়ক।
অন্যদিকে, স্বাগতিক বেনফিকা একের পর এক আক্রমণ চালিয়েও বল জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। বল দখলের পাশাপাশি লক্ষ্যে শট নেওয়ার দিক থেকেও তারা এগিয়ে ছিল, কিন্তু সব ছাপিয়ে গেছে বার্সেলোনার রক্ষণভাগের অনমনীয় প্রতিরোধ।
ম্যাচের মাত্র ২০ সেকেন্ডেই প্রথম সুযোগ তৈরি করে বেনফিকা। কেরেম আকতুর্কওগ্লুর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন স্ট্যান্সনি। এরপর এক মিনিটের মধ্যে আরও একবার ভয়ঙ্কর আক্রমণে ওঠে স্বাগতিকরা। এবার বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দির হেড রুখে দেয় বার্সার রক্ষণ।
অন্যদিকে, প্রথমবারের মতো আক্রমণে যায় বার্সেলোনা নবম মিনিটে। কুবার্সির হেড দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন বেনফিকা গোলরক্ষক আনাতোলি ত্রুবিন। এরপর একের পর এক সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। ১২ মিনিটের মধ্যে দানি ওলমো, রবার্ট লেভানদোভস্কি ও লামিনে ইয়ামালের তিনটি শট ঠেকিয়ে দেন ত্রুবিন।
১৬তম মিনিটে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন বেনফিকার ভানজেলিস পাভলিদিস। কিন্তু মাত্র ছয় মিনিট পর তাকে থামাতে গিয়ে মারাত্মক ফাউল করে বসেন তরুণ ডিফেন্ডার পাউ কুবার্সি। ফলে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
এই লাল কার্ড বার্সেলোনাকে চাপের মুখে ফেলে দেয়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে তার চেয়ে কম বয়সে লাল কার্ড দেখেছেন কেবল সেলেস্তিন বাবাইয়ারো (১৬ বছর ৮৬ দিন)।
এরপর ফ্রি-কিক থেকে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বেনফিকা, কিন্তু ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত সেভ করেন স্ট্যান্সনি। রক্ষণ আরও মজবুত করতে ২৮তম মিনিটে ওলমোর পরিবর্তে রোনাল্ড আরাউহোকে নামান কোচ ফ্লিক।
প্রথমার্ধের শেষদিকে বার্সেলোনা নিজেদের অর্ধ থেকে বের হতে পারেনি। ৪৩তম মিনিটে আকতুর্কওগ্লুর হেড আবারও ঠেকিয়ে দেন স্ট্যান্সনি।
প্রথমার্ধে বার্সেলোনার বল দখল ছিল ৬০ শতাংশ, শট নিয়েছিল ৮টি, যার ৪টি লক্ষ্যে ছিল। অন্যদিকে, বেনফিকা নিয়েছিল ১১টি শট, যার মাত্র ৩টি লক্ষ্যে ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণ চালিয়ে যায় বেনফিকা। ৪৭তম মিনিটে দূরপাল্লার শটে স্ট্যান্সনিকে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন ওরকুন কোকু, কিন্তু ব্যর্থ হন।
৫০তম মিনিটে আরও একটি বড় সুযোগ নষ্ট করে বেনফিকা। গোলমুখ থেকে ছয় গজ দূর থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন পাভলিদিস।
এরপর ৫১তম মিনিটে ম্যাচের অন্যতম সেরা সেভ করেন স্ট্যান্সনি। ফেডরিক অরসেন্সের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে ফেরান তিনি, ফিরতি বলে পাভলিদিস শট নেওয়ার আগেই পা বাড়িয়ে বল বাইরে পাঠিয়ে দেন বার্সার গোলরক্ষক।
তীব্র চাপের মধ্যেই ৬১তম মিনিটে অসাধারণ এক গোল করে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন রাফিনিয়া। বেনফিকার ডিফেন্ডার আন্তোনিও সিলভার একটি দুর্বল ব্যাকপাস ধরে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে পোস্ট ঘেঁষে জালে পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
এটি চলতি আসরে তার নবম গোল।
এরপরও একের পর এক আক্রমণ করে বেনফিকা। ৭৭তম মিনিটে আকতুর্কওগ্লুর শট ফিরিয়ে দেন স্ট্যান্সনি।
৮২তম মিনিটে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান, কারণ বার্সেলোনা গোলরক্ষক স্ট্যান্সনি বক্সের ভেতরে আন্দ্রেয়া বেলোত্তিকে ফাউল করেছিলেন। তবে ভিএআরের সাহায্যে দেখা যায়, আক্রমণের শুরুতেই বেলোত্তি অফসাইডে ছিলেন। ফলে সিদ্ধান্ত বদলানো হয়।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একের পর এক আক্রমণ করেও গোলের দেখা পায়নি বেনফিকা। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে রেনাতো সানচেসের দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন স্ট্যান্সনি, নিশ্চিত করেন বার্সেলোনার জয়।
এখন সব নজর ফিরতি লেগের দিকে। আগামী মঙ্গলবার বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ক্যাম্প নউয়ে হবে দ্বিতীয় লেগ। সেখানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে বেনফিকা, অন্যদিকে হান্সি ফ্লিকের দল ঘরের দর্শকদের সামনে জয় নিশ্চিত করতে চাইবে।
এই উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের ফলই নির্ধারণ করবে, কে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে!