ক্যাটাগরি গুলো: ফুটবল

ভিনিকে কাঁদতে বলেই কাঁদলো সিটি

ইতিহাদে ‘স্টপ ক্রাইং ইউর হার্ট আউট’, জবাবে ভিনির শো!

স্টপ ক্রাইং ইউর হার্ট আউট জবাবে ভিনির শো

চ্যাম্পিয়নস লিগের উত্তেজনার মধ্যেও ফুটবল কখনো কখনো নাটকের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে ওঠে। ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাদ স্টেডিয়ামে গতরাতের রাতটাও ছিল ঠিক তেমনই। দুই দল যখন মাঠে, তখন চ্যাম্পিয়নস লিগের ঐতিহ্যবাহী সংগীত বাজছিল। কিন্তু স্টেডিয়ামের ক্যামেরা ঘুরে গেল গ্যালারির দক্ষিণ দিকে—সেখানে ফুটবল-সমর্থকদের চোখ আটকে গেল বিশাল এক তিফোতে

কালো ব্যানারের ওপর উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে ব্যালন ডি’অর ট্রফিতে রদ্রির চুম্বনের ছবি। তার ঠিক পাশেই বড় হলুদ হরফে লেখা— “STOP CRYING YOUR HEART OUT”। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, “কেঁদেকেটে বুক ভাসিও না!” ব্যানারটি প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে শোভা পায় গ্যালারিতে।

সিটির সমর্থকদের পরিচিত গোষ্ঠী ‘We Are 1894’ ব্যানারটি প্রদর্শন করে। কিন্তু এ খোঁচা যে ঠিক কাদের উদ্দেশে, তা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি কারও। অক্টোবরে ব্যালন ডি’অর বিতর্কের কথা কি মনে আছে? রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র সেই সময় প্রধান দাবিদার হয়েও পুরস্কারটি পাননি। ব্যালন ডি’অর রদ্রির হাতে ওঠার আগেই রিয়াল মাদ্রিদ সেই আয়োজন বর্জন করেছিল। এরপর থেকে ক্লাব এবং ভিনিসিয়ুস—দুজনেই ব্যালন ডি’অরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সিটির সমর্থকদের কাছে সেটি সহজভাবে নেওয়ার বিষয় ছিল না। তাদের চোখে, এটি ছিল রদ্রির প্রতি অবিচার নয়, বরং সিটির শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি। ফলে গতকাল রাতে যখন রিয়াল মাদ্রিদ প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অর বিতরণের পর ইতিহাদে পা রাখল, তখন ‘সিটিজেন’ সমর্থকেরা যে এমন অভ্যর্থনা দেবেন, তা মাদ্রিদ শিবিরেরও বোঝা উচিত ছিল!

রদ্রির হাসি আর ভিনির প্রত্যাঘাত

গ্যালারিতে বসে রদ্রিও মুহূর্তটি উপভোগ করেছেন তীব্র আনন্দে। স্মার্টফোন বের করে ব্যানারের ছবি তুলে রেখেছেন স্মৃতি হিসেবে। ব্যালন ডি’অর বিতর্ক নিয়ে যার সঙ্গে এতদিন তর্ক চলেছে, সেই ভিনিসিয়ুসকে উদ্দেশ্য করে নিজ দলের সমর্থকদের এমন শক্তিশালী বার্তা নিশ্চয়ই রদ্রির জন্য দারুণ এক তৃপ্তির ব্যাপার।

আর এই ব্যানারের ভাষাও ছিল পুরোপুরি ‘সিটি-সুলভ’। ১৯৯১ সালে ম্যানচেস্টারে জন্ম নেওয়া জনপ্রিয় ব্রিটিশ ব্যান্ড ওয়েসিস-এর বিখ্যাত গান ‘স্টপ ক্রাইং ইউর হার্ট আউট’ থেকে নেওয়া হয় এই শিরোনাম। এই ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নোয়েল গ্যালাঘার নিজেও সিটির অন্ধ সমর্থক। কাল রাতেই, ম্যাচের আগে টকস্পোর্টে নোয়েল নিজের বিশ্লেষণ দিয়েছিলেন। তবে অতিরিক্ত প্রত্যাশার বোঝা চাপাননি দলটির ওপর।

কিন্তু গ্যালারির ‘স্কাই ব্লু’ সমর্থকেরা? তারা বাস্তবতার ধার ধারেনি! যতবার ভিনিসিয়ুস বল স্পর্শ করেছেন, ততবারই দুয়ো ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছে স্টেডিয়াম। এক পর্যায়ে পুরো স্টেডিয়াম একসঙ্গে গাইতে শুরু করে—“Where’s your Ballon d’Or? Where’s your Ballon d’Or?” (তোমার ব্যালন ডি’অর কোথায়?)

কিন্তু ভিনিসিয়ুস? তিনি জবাব দিলেন মাঠেই। প্রথমে স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে তাকিয়ে বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে নিজের বাহুর “১৫” সংখ্যাটি দেখালেন। বুঝিয়ে দিলেন, হয়তো তার ব্যালন ডি’অর নেই, তবে তার ক্লাব রিয়ালের ১৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা রয়েছে!

এরপর তিনি যা করলেন, তা শুধুই ফুটবলীয় সৌন্দর্য নয়, বরং প্রত্যাঘাতের এক জীবন্ত উদাহরণ।

ভিনির পারফরম্যান্স: দুয়োর জবাবে রাজকীয় ফুটবল

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র মাঠে নামলেন যেন বিদ্রোহের আগুন নিয়ে। তার পারফরম্যান্স ছিল পরিসংখ্যানেও চমকে দেওয়ার মতো—

  • ৪৪ বার বল স্পর্শ
  • ৫টি পরিষ্কার সুযোগ তৈরি—ম্যাচে সর্বোচ্চ
  • ৫টি সফল ড্রিবলিং
  • ১টি গোল করানো (জুড বেলিংহামের গোল)
  • ১টি পোস্টে লেগে যাওয়া শট

বিশেষ করে ৯২ মিনিটে জুড বেলিংহামকে দিয়ে করানো গোলটি ছিল ঠিক যেন তিরের ফলার মতো। এই গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউটে লিওনেল মেসিকে ছুঁয়ে ফেললেন ভিনি। মেসি যেখানে ৭৭ ম্যাচে ১২টি গোল বানিয়েছেন, ভিনি সেটি করেছেন মাত্র ৩০ ম্যাচেই!

সিটির সমর্থকেরা যা-ই করুক, তারা নিশ্চিতভাবেই ভাবেনি যে তাদের দেওয়া খোঁচাই ভিনির জন্য পরিণত হবে অতিরিক্ত প্রেরণায়!

ম্যাচ শেষে মুভিস্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিনিসিয়ুস বললেন,

“ব্যানারটি দেখেছি। প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা যখন এমন কিছু করে, সেগুলো আমাকে আরও বেশি শক্তি জোগায় এবং আজ আমি সেটাই করেছি!”

রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলত্তিও একই মত দিলেন—

“আমি জানি না, ভিনি ব্যানার দেখেছে কি না। তবে মাঠের খেলায় যা দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে ওটা দেখে সে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছে!”

সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার অবশ্য দাবি, তিনি ব্যানারটি দেখেননি। তবে ভিনির খেলা যে দেখেছেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন নির্দ্বিধায়। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের বললেন, “সে অসাধারণ এক খেলোয়াড়!”

সিটির সমর্থকেরা তাদের মত করে চেষ্টা করেছে রিয়ালকে মানসিক চাপে ফেলতে। তবে ফল উল্টো হলো। ভিনির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিটি ৩-২ গোলে হেরে গেছে। ম্যাচ শেষে রিয়ালের মিডফিল্ডার দানি সেবায়োসের মন্তব্য নিশ্চয়ই সিটির সমর্থকদের জন্য কাঁটার মতো বিঁধবে—

“তারা যা খুশি করতে পারে। আমাদের ভিনিসিয়ুস আছে। বিশ্বের সেরা ফুটবলার!”

এখন প্রশ্ন হলো— বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগে কী হবে?

রিয়াল সমর্থকেরা কি সিটির এই ‘ব্যানার যুদ্ধের’ জবাব দেবে? নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেও আমরা কিছু বিশেষ আয়োজন দেখতে পাব! সম্ভবত সেই প্রস্তুতি এখনই শুরু হয়ে গেছে।

আর সিটি? এবার তাদের জন্যই বোধ হয় সেই গান—

STOP CRYING YOUR HEART OUT!”

শেয়ার করুন

সাম্প্রতিক পোস্ট

  • নির্বাচন

জামায়াতসহ ৮ দলের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদ ইসলামের কাছে চিঠি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক…

ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫
  • ফুটবল

জিদান পুত্রের বীরত্বে আলজেরিয়ার জয়

গত দুই আসরের হতাশা ও ব্যর্থতার স্মৃতি পেছনে ফেলে দারুণ এক জয়ে ২০২৫ আফ্রিকা কাপ…

ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫
  • নির্বাচন

জামায়াতসহ ৮ দল জোটবদ্ধ, আসতে পারে এনসিপি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল একই ভোট বাক্সে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনায় নির্বাচনী সমঝোতার…

ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫
  • ফুটবল

ঘরের মাঠে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ

আজ (মঙ্গলবার) রাত ৮টায় ঢাকার মাটিতে ফুটবল মাঠে শুরু হচ্ছে এক নতুন অধ্যায়, যেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী…

নভেম্বর ১৮, ২০২৫
  • ফুটবল

আজ রাতে মুখোমুখি ব্রাজিল বনাম সেনেগাল

আর্সেনালের ঐতিহ্যবাহী ঘরের মাঠ এমিরাটস স্টেডিয়াম শনিবার রাত ১০টায় পরিণত হতে যাচ্ছে এক রঙিন ফুটবল…

নভেম্বর ১৫, ২০২৫
  • দূর্ঘটনা

আমতলীতে পাগলা কুকুরের কামড়ে ১৫ জন আহত

বরগুনার আমতলী পৌরসভায় এক পাগলা কুকুরের কামড়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।…

নভেম্বর ২, ২০২৫