শেষ শেষ মুহূর্তের গোলে নাটকীয় জয় সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ
লেগানেস ২:৩ রিয়াল মাদ্রিদ
কোপা দেল রের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ লেগানেসের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কাগজে-কলমে ফেভারিট থাকলেও লেগানেস যে এতটা কঠিন পরীক্ষা নেবে, তা হয়তো আগে থেকে অনুমান করা যায়নি। দুই গোলের লিড নিয়েও স্বস্তিতে থাকতে পারেনি লস ব্লাঙ্কোসরা। প্রতিপক্ষ দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরলেও শেষ মুহূর্তের এক গোলে রিয়াল মাদ্রিদ নিশ্চিত করেছে সেমিফাইনালের টিকিট। ৯৩তম মিনিটে বদলি খেলোয়াড় গঞ্জালো গার্সিয়ার হেড থেকেই আসে ম্যাচ নির্ধারণী গোল, যা দলকে এনে দেয় ৩-২ গোলের রোমাঞ্চকর জয়।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে দলটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন তারকাকে ছাড়াই। ইনজুরির কারণে কিলিয়ান এমবাপে ও জুড বেলিংহ্যাম ছিলেন না একাদশে, বেঞ্চে রাখা হয়েছিল ভিনিসিউস জুনিয়রকেও। তা সত্ত্বেও শুরুটা দুর্দান্ত করে রিয়াল।
১৩তম মিনিটেই ব্রাহিম দিয়াজের তৈরি করা একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারতেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ এন্দ্রিক, কিন্তু তার দুর্বল শট ফিরিয়ে দেন লেগানেসের গোলরক্ষক। তবে পাঁচ মিনিট পরই গোলের দেখা পায় রিয়াল মাদ্রিদ। রদ্রিগোর বাড়ানো বল থেকে দুর্দান্ত এক শটে দলকে এগিয়ে দেন অভিজ্ঞ লুকা মদ্রিচ।
২৫তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তরুণ ফরোয়ার্ড এন্দ্রিক। ছয় গজ বক্সের সামনে থেকে সহজ এক ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান তিনি, রিয়াল তখন ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে। মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি হয়তো অনায়াসেই জিতে যাবে লস ব্লাঙ্কোসরা।
তবে লেগানেস এত সহজে হার মানার দল নয়। ৩৯তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান হুয়ান ক্রুস। রিয়ালের তরুণ ডিফেন্ডার ইয়াকোবো রামনের হাতে বল লাগলে রেফারি ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (VAR) সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। স্পট-কিক থেকে গোল করে স্বাগতিক দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন ক্রুস।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রদ্রিগোর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ভিনিসিউস জুনিয়র। তার গতির কারণে রিয়ালের আক্রমণে আরও গতি আসলেও ফিনিশিংয়ে ছিলেন ব্যর্থ। সহজ দুটি সুযোগ নষ্ট করে হতাশ করেন তিনি। আর এই ব্যর্থতার প্রায়শ্চিত্ত যেন করায় লেগানেস!
৫৯তম মিনিটে দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে হুয়ান ক্রুস তার দ্বিতীয় গোল করেন, সমতায় ফেরে লেগানেস। রিয়ালের ডিফেন্স তখন বেশ অগোছালো অবস্থায় ছিল, আর সেই সুযোগ কাজে লাগায় স্বাগতিকরা।
২-২ সমতা আসার পর রিয়াল মাদ্রিদ মরিয়া হয়ে ওঠে ম্যাচ জেতার জন্য। ব্রাহিম দিয়াজ ও ভিনিসিউস কয়েকটি দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করলেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না লস ব্লাঙ্কোসরা। তাদের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে, যেন ভাগ্যও সঙ্গে নেই রিয়ালের।
অবশেষে অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা তিন মিনিটের শেষ মুহূর্তে আসে ম্যাচের নাটকীয় মোড়। ডান দিক থেকে ব্রাহিম দিয়াজের নিখুঁত ক্রসে ছয় গজ বক্সে লাফিয়ে দুর্দান্ত হেড করেন বদলি খেলোয়াড় গঞ্জালো গার্সিয়া। তার গোলেই নিশ্চিত হয় রিয়ালের জয় এবং কোপা দেল রের সেমিফাইনালের টিকিট।
রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এই ম্যাচটি শুধুমাত্র একটি জয় নয়, বরং কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার একটি অভিজ্ঞতা। লেগানেস দেখিয়ে দিয়েছে, ফুটবলে নাম নয়, পারফরম্যান্সই মুখ্য। তবে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী থাকবে আনচেলত্তির দল। এখন তাদের লক্ষ্য সেমিফাইনাল পেরিয়ে ট্রফির আরও কাছে যাওয়া।