ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, এটি এক বিশাল আবেগের নাম। প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা, সিরি ‘আ’ কিংবা আফ্রিকান নেশন্স কাপ—সব জায়গাতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবগুলোর লড়াই ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে রোমাঞ্চের ঝড় তোলে। মাঠের খেলার উত্তেজনা ছাপিয়ে কখনো কখনো এসব ম্যাচ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নানা প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাত্র ৯০ মিনিটের খেলা হলেও এই সময়ে উত্তেজনা ও রোমাঞ্চে ভরপুর প্রতিটি মুহূর্ত।

কিন্তু ক্লাব ফুটবলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই সবার আগে উচ্চারিত হয় বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের নাম। শতাব্দী-প্রাচীন এই দুই স্প্যানিশ জায়ান্টের লড়াই কেবল একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, এটি দুই শহর, দুই সংস্কৃতি ও দুই দর্শন—সবকিছুর সংঘাত। ১৯০২ সালে শুরু হওয়া এই দ্বৈরথ এখনো সমানভাবে উত্তেজনাপূর্ণ। ‘এল ক্লাসিকো’ নামে খ্যাত এই ম্যাচে একদিকে যেমন রয়েছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু, রবার্তো কার্লোসের মতো কিংবদন্তি, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে জাভি, ইনিয়েস্তা, মেসি কিংবা রোনালদোর মতো তারকা ফুটবলারদের অবদান।
নতুন বছরে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হতে চলেছে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী অপেক্ষা করছে এই মহারণ দেখার জন্য। প্রতিবারের মতো এবারও দুই দলের লড়াইয়ে থাকবে টানটান উত্তেজনা, থাকবে জয়ের জন্য মরিয়া লড়াই।
স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমিফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বার্সেলোনা। সৌদি আরবের জেদ্দায় কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলেছে কাতালানরা। ম্যাচে বার্সেলোনার আক্রমণভাগ ছিল দুর্দান্ত। ফলে নির্ধারিত সময়েই জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে শাভির শিষ্যরা।
অন্যদিকে, ম্যালোর্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদও দেখিয়েছে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। বৃহস্পতিবার রাতে একই মাঠে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বেলিংহ্যাম, রদ্রিগো এবং ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের এক আত্মঘাতী গোলে ৩-০ ব্যবধানে জয় পায় লস ব্লাঙ্কোরা। রিয়ালের হয়ে মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা। এই জয়ের ফলে টানা চতুর্থবারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ।
স্প্যানিশ সুপার কাপের ইতিহাসে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বরাবরই উত্তেজনাপূর্ণ। এখন পর্যন্ত ১৩ বার এই প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে, সর্বোচ্চ ১৪ বার শিরোপা জিতে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বার্সেলোনা। গেল মৌসুমে সুপার কাপের ফাইনালে বার্সেলোনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল কার্লো আনচেলত্তির দল। এবারও ফাইনালে সেই দুই দল মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
নতুন বছরে প্রথম ‘এল ক্লাসিকো’ দেখতে ফুটবল ভক্তদের উত্তেজনা তুঙ্গে। মাঠে নামার আগে দুই দলের খেলোয়াড়রাও নিজেদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল মাদ্রিদ এবং শাভি হার্নান্দেজের বার্সেলোনার মধ্যে কে এগিয়ে থাকবে, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে একটাই ব্যাপার নিশ্চিত, ফাইনালের এই ম্যাচে পাওয়া যাবে উত্তেজনা, রোমাঞ্চ এবং দুর্দান্ত ফুটবলের স্বাদ।
আগামীকাল রাত ১টায় সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে শুরু হবে বছরের প্রথম ‘এল ক্লাসিকো’। ফুটবলপ্রেমীরা প্রস্তুত, প্রস্তুত দুই দলের খেলোয়াড়রাও। এবার দেখার অপেক্ষা, কে জিতে নেয় এই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার মহারণ।