২৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগার ঐতিহ্যবাহী “এল ক্লাসিকো” ম্যাচে মুখোমুখি হয়। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় মাদ্রিদের ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। এই ম্যাচটি ছিল বার্সেলোনার জন্য এক স্মরণীয় জয়, কারণ তারা ৪-০ গোলে রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করে, যা স্পেনের ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত।
ম্যাচের প্রথমার্ধে দু’দলই অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল খেলে। রিয়াল মাদ্রিদ আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেছিল এবং কিছু উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করেছিল। তবে বার্সেলোনার রক্ষণভাগ অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলে রিয়ালের প্রতিটি আক্রমণ ব্যর্থ করে। কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়র রিয়ালের পক্ষে গোল করার বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও, সেগুলি বার্সেলোনার রক্ষণভাগে আটকে যায়। ম্যাচের প্রথমার্ধে কোন দলই গোল করতে সক্ষম হয়নি, এবং স্কোরলাইন ছিল ০-০।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচটি সম্পূর্ণভাবে বার্সেলোনার পক্ষে চলে যায়। ম্যাচের ৫৪ তম মিনিটে রবার্ট লেভানদোভস্কি প্রথম গোলটি করেন, যা বার্সেলোনাকে ১-০ লিড দেয়। মাত্র ২ মিনিট পর, ৫৬ মিনিটে লেভানদোভস্কি আবার গোল করে ২-০ ব্যবধানে লিড বাড়িয়ে নেন। এই দুটি দ্রুত গোল রিয়াল মাদ্রিদকে বড় ধাক্কা দেয়, এবং দলটি আক্রমণভাগে ফেরা চেষ্টা করলেও তারা গোলের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়।
এরপর, বার্সেলোনা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তরুণ ফুটবলার লামিন ইয়ামাল ৭৭ তম মিনিটে তৃতীয় গোলটি করেন, যা তাদের জয়ের পথ সহজ করে তোলে। ম্যাচের শেষ দিকে, ৮৪ তম মিনিটে রাফিনহা চতুর্থ গোলটি করে ম্যাচটি সম্পূর্ণরূপে বার্সেলোনার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। রাফিনহার এই গোলটি ছিল ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, যা দর্শকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সঞ্চার করে।
রিয়াল মাদ্রিদ তাদের ৪২-ম্যাচের অপরাজিত ধারাবাহিকতায় ছিল এবং এই হার তাদের জন্য একটি বড় আঘাত। কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়ালের হয়ে গোল করার দুটি সুযোগ পান, কিন্তু উভয়টি অফসাইডের কারণে বাতিল করা হয়। এই ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান সমস্যা ছিল তাদের ফিনিশিং, কারণ তারা বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও, সেগুলির কোনওটিই কার্যকর করতে পারেনি। কোচ কার্লো আনচেলত্তি ম্যাচের পর বলেন যে তারা প্রথমার্ধে ভালো খেলেছিল, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল খেয়ে তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
এই জয়ের মাধ্যমে বার্সেলোনা এখন লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে, এবং তারা ৩০ পয়েন্ট নিয়ে রিয়ালের চেয়ে ৬ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে। বার্সেলোনার এই জয় রিয়াল মাদ্রিদের জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা ছিল বার্সেলোনার ৪৩-ম্যাচের রেকর্ড সমান করার খুব কাছাকাছি।
বার্সেলোনার কোচ হানসি ফ্লিক এই জয়কে দলের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ম্যাচটি খেলতে পেরেছে। ফ্লিকের মতে, দলটি প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ভেদ করেছে। অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদের কোচ আনচেলত্তি ম্যাচের পর বলেন যে তারা গোল করার সুযোগ মিস করেছিল, এবং এটি তাদের জন্য একটি শিখার সুযোগ। তিনি দলের মানসিকতা ধরে রাখতে এবং মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলোতে উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান।
এই জয়ের মাধ্যমে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার দীর্ঘকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাসে আরেকটি নতুন অধ্যায় যোগ হলো, যা ফুটবল প্রেমীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন
কমলা নাকি ট্রাম্প: চীনারা কাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট চান
এল ক্লাসিকো: লা লিগার শীর্ষে থাকার লড়াইয়ে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাতে কুয়াকাটায় ১৩টি ঘর বিধ্বস্থ, বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ