
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিতব্য জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে ঘিরে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার দুপুরে অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনের এলাকা থেকে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অবস্থানকারীদের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।
চাক্ষুষ সাক্ষীদের বরাতে জানা গেছে, পুলিশ সেখানে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে কয়েকজন আহত হন। আহতদের দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়—একদলকে খামারবাড়ি মোড়ের দিকে এবং আরেকদলকে আসাদ গেট প্রান্তের দিকে ঠেলে দেয়। তবুও কিছু বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি আবারও মঞ্চের দিকে ঢোকার চেষ্টা করেন, ফলে পুলিশ দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে তাদের সরে যেতে বাধ্য করে।
দুপুর দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে ধোঁয়া ও আগুনের ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলে। এর কিছুক্ষণ আগে, প্রায় বেলা পৌনে দুইটার দিকে, কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যা আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভের পর শুক্রবার সকালে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে শতাধিক মানুষ সংসদ ভবন এলাকার ১২ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশ করেন এবং স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অতিথিদের চেয়ারে বসে স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছেন—জুলাই আন্দোলনে তাঁদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে, পাশাপাশি আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাদের অভিযোগ, “জুলাই সনদে তাঁদের আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি।”
অন্যদিকে আজ বিকেল চারটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে সরকার। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। তবে সনদকে ঘিরে সব দল একমত নয়—কেউ কেউ এখনো আইনি নিশ্চয়তা ও সংশোধন দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা এতে স্বাক্ষর করবে না। একইসঙ্গে বাম ধারার চারটি দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদও ঘোষণা দিয়েছে, সংশোধিত খসড়া হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা সনদে সই করবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন এক মোড় এসেছে। একদিকে সরকার চায় এই সনদকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে, অন্যদিকে আন্দোলনকারী ও বিরোধী দলগুলোর একটি অংশ আইনি নিশ্চয়তা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ছাড়া স্বাক্ষর করতে রাজি নয়। এর ফলে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় তৈরি হয়েছে চরম উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার আবহ।