
রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী ৭ নম্বর জার্সির ওজন অনেক। এই জার্সি একসময় কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গায়ে শোভা পেয়েছিল। ২০১৮ সালে রোনালদোর বিদায়ের পর এটি পরার সুযোগ পেয়েছিলেন মারিয়ানো দিয়াজ ও এডেন হ্যাজার্ড, কিন্তু কেউই তার রেখে যাওয়া শূন্যতা পূরণ করতে পারেননি। অবশেষে ৭ নম্বর জার্সি তুলে দেওয়া হয় ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিউস জুনিয়রের হাতে। আর তার পর থেকেই যেন জার্সিটি ফিরে পেয়েছে তার হারানো গৌরব।
প্রথম দিকে রিয়ালে ভিনিসিউসের পথচলা সহজ ছিল না। গোল মিস, খেলার ধরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল প্রচুর। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন, পরিণত হয়েছেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের একজনে। শুধু রিয়াল মাদ্রিদই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে গোটা ফুটবল বিশ্বেই অন্যতম সেরা তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। এমন একজন খেলোয়াড়কে সহজে হাতছাড়া করতে চাইবে না লস ব্লাঙ্কোসরা, আর তাই তাকে ধরে রাখার পরিকল্পনা হিসেবে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল ক্লাবটি।
কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, রিয়ালের দেওয়া নতুন চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ভিনিসিউস! স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক ‘রেলেভো’ ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের আলোচনা শুরু হলেও, প্রাথমিক প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
ভিনিসিউস বর্তমানে যে পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন, তাতে তিনি নিজেকে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের কাতারে রাখতে চান, আর স্বাভাবিকভাবেই চান উপযুক্ত পারিশ্রমিক। ‘দ্য ডেইলি মেইল’ জানিয়েছে, রিয়ালের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মূল কারণ বেতন বৃদ্ধি নিয়ে মতানৈক্য। কর বাদ দিয়ে তার বর্তমান বেতন প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড— যা পিএসজির কিলিয়ান এমবাপ্পের বেতনের সমান। তবে ভিনিসিউস তার পারফরম্যান্সের সঙ্গে মানানসই আরও বড় অঙ্কের বেতন চান।
অন্যদিকে, সৌদি প্রো লিগের ক্লাবগুলোও তাকে পেতে আগ্রহী। গত গ্রীষ্মে সৌদি আরবের ক্লাবগুলোর সঙ্গে ভিনিসিউসের প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়েছিল। এরপর গত ডিসেম্বরে সৌদি প্রতিনিধিরা আবারও তার শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই পরিস্থিতি রিয়াল মাদ্রিদকে আরও চিন্তায় ফেলেছে, কারণ তারা চায় না যে দলের সেরা খেলোয়াড়দের একজন সৌদি আরবের ক্লাবগুলোর লোভনীয় প্রস্তাবে প্রভাবিত হয়ে চলে যান।
২০১৮ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গো থেকে ৩৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড ট্রান্সফার ফিতে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন ভিনিসিউস জুনিয়র। শুরুতে তাকে ‘অসমাপ্ত প্রতিভা’ হিসেবে দেখা হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে উঠেছেন। রিয়ালের জার্সিতে এখন পর্যন্ত ২৯৩ ম্যাচে ১০১টি গোল ও ৮৩টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ক্লাব জিতেছে দুটি লা লিগা, দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও দুটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।
তবে এই সাফল্যের পরও রিয়ালে তার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। যদি রিয়াল তার বেতন বৃদ্ধির দাবি মেনে না নেয়, তাহলে কি তিনি অন্য কোথাও পাড়ি জমাবেন? সৌদি ক্লাবগুলো কি বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব দিয়ে তাকে স্পেন ছাড়তে বাধ্য করবে? নাকি শেষ পর্যন্ত রিয়ালই তাকে ধরে রাখতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই।