ক্যাটাগরি গুলো: আন্তর্জাতিক

গাজায় আবারও রক্তগঙ্গা, একদিনেই নিহত ৮৯

গাজায় একদিনেই নিহত ৮৯ জন

নিশ্ছিদ্র অবরোধে জর্জরিত গাজায় একরাশ রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। শুক্রবার (২৫ জুলাই) দিনভর চালানো একের পর এক ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৯ জন ফিলিস্তিনি। এদিন আহত হয়েছেন আরও ৪৬৭ জন। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, শুক্রবারের গণহত্যাসদৃশ হামলার পর চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৬৭৬ জনে। একই সঙ্গে গত ৯ মাসের ভয়াল সহিংসতায় আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬৫ জন ফিলিস্তিনি—যাদের মধ্যে রয়েছে বহু নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ সংঘাতের সূচনা। ওই দিন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এক চমকে দেওয়ার মতো অভিযানে ইসরাইলের ভেতরে প্রবেশ করে। হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এর জবাবে একই দিন থেকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় নজিরবিহীন সামরিক অভিযান শুরু করে। আকাশপথ থেকে বোমাবর্ষণ, স্থল অভিযান, জলপথে অবরোধ—সবদিক থেকেই চেপে ধরে ফিলিস্তিনি জনগণকে।

১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই নিষ্ঠুর অভিযানের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। কিন্তু সেই শান্তি স্থায়ী হয়নি। যুদ্ধবিরতির দুই মাস পার না হতেই, ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক আগ্রাসন শুরু করে আইডিএফ।

দ্বিতীয় দফার অভিযানে মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে গাজায় নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮ হাজার ৫২৭ জন ফিলিস্তিনি। এ সময়ে আহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৯৩৪ জনের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গোটা গাজা উপত্যকায় হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র—কোনো স্থানই নিরাপদ নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে বর্ণনা করেছে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে।

হামাসের দ্বারা অপহৃত ২৫১ জন ইসরায়েলির মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করছে আইডিএফ। তাদের উদ্ধারের নামে এই রক্তক্ষয়ী অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের লক্ষ্য শুধুমাত্র জিম্মি উদ্ধার নয়; বরং গাজার অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎও ধ্বংস করে দেওয়া।

এই নারকীয় পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। জাতিসংঘ, ওআইসি, মানবাধিকার সংগঠন কিংবা মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো—কারো পক্ষ থেকেই নেই কার্যকর পদক্ষেপ। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনি জনগণ নিঃসঙ্গ, ক্ষতবিক্ষত ও নিরস্ত্র এক সংগ্রামের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

এই ভয়াবহ মানবিক সংকটের অবসান কবে হবে, আদৌ হবে কিনা—তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ইতিহাস একদিন এই বর্বরতার বিচার করবে।

শেয়ার করুন

সাম্প্রতিক পোস্ট

  • ফুটবল

বরগুনার আমতলীতে শুরু হচ্ছে “বিডি লীগ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৬”

বাংলাদেশের ফুটবল সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত করার লক্ষ্য নিয়ে বিডিলীগ ডটকম  আয়োজন করতে যাচ্ছে…

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মোবাইল ফোনের চার্জার যে কারণে সাদা বা কালো রঙের হয়

কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন কিংবা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে চার্জার একটি অপরিহার্য সরঞ্জাম। আমরা যেমন…

সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ফোনের ডায়ালপ্যাড হঠাৎ বদলে গেল কেন? জেনে নিন!

সম্প্রতি গুগল তাদের Google Phone App-এ বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে ডায়ালপ্যাড, হোমপেজ ও…

আগস্ট ২৪, ২০২৫
  • স্বাস্থ্য

মাছ নাকি মাংস – কোনটা শরীরের জন্য বেশি জরুরি?

বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যসংস্কৃতিতে মাছ ও মাংসের গুরুত্ব অপরিসীম। ভাতের সঙ্গে মাছ কিংবা মাংস – দুইটিই…

আগস্ট ১৯, ২০২৫
  • সৌরজগৎ

সৌরজগতের প্রান্তে নতুন এক রহস্যময় বামন গ্রহের সন্ধান

সাম্প্রতিক এক যুগান্তকারী আবিষ্কারে সৌরজগতের প্রায় শেষ প্রান্তে, প্লুটোরও বহু দূরের এক রহস্যঘেরা অঞ্চলে, নতুন…

জুলাই ২৫, ২০২৫
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বড় ডিসপ্লেতেই স্যামসাং গ্যালাক্সি S26 Ultra

নিশ্চিতভাবেই গ্যালাক্সি ফোল্ড৭ ও ফ্লিপ৭-এর মোড়ক উন্মোচনের রেশ কাটেনি, এরই মধ্যে স্যামসাং-এর পরবর্তী ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন…

জুলাই ২৩, ২০২৫