আমরা সবাই কমবেশি অভিকর্ষজ ত্বরণ বা গ্র্যাভিটেশনাল অ্যাকসিলারেশন (g)-এর কথা জানি। সহজভাবে বললে, পৃথিবী প্রতি একক ভরের বস্তুকে যে হারে নিজের দিকে টানে, সেটাই হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ। এই টান বা বল আসে মহাকর্ষ শক্তি থেকে, যা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী কাজ করে।
পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে এই g-এর মান গড়ে প্রায় ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড²। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর ওপর থেকে যত ওপরে উঠবেন বা নিচে নামবেন, g-এর মান তত কমতে থাকবে। তবে উপরে উঠলে আর নিচে নামলে g-এর কমার কারণ কিন্তু এক নয়।
ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠলে আপনি আসলে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী, দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষ বল (F) নির্ভর করে তাদের ভরের গুণফল এবং তাদের মধ্যকার দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতে:
F = G × (m₁ × m₂) / r²
এখানে, দূরত্ব r বাড়লে মহাকর্ষ বল দ্রুত কমে। কারণ বর্গের ব্যস্তানুপাতের কারণে টান হ্রাস পায়। ফলে g-এর মানও কমে।
এবার ধরুন আপনি মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর গভীরে নামা শুরু করলেন। তাহলে? তখন তো পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে আপনার দূরত্ব কমে যাচ্ছে! তাহলে কি g বাড়বে? না, উল্টো g-এর মান কমতে থাকবে। কিন্তু এবার এর পেছনে রয়েছে আরেকটি চমকপ্রদ ব্যাখ্যা।
পৃথিবীর ভেতরে নামলে আপনার চারপাশে পৃথিবীর ভর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। একসময় আপনি এমন একটি স্থানে পৌঁছাবেন যেখানে আপনার ওপরে ও নিচে সমান ভর থাকবে। এই পরিস্থিতিতে নিচের ভর আপনাকে টানবে নিচের দিকে, আর ওপরের ভর টানবে ওপরের দিকে। ফলে, এই বিপরীতমুখী বলগুলো একে অপরের প্রভাবকে ধীরে ধীরে বাতিল করে দিতে শুরু করে।
এভাবে আপনি যদি একদম পৃথিবীর কেন্দ্রে পৌঁছে যান, তাহলে আশেপাশে থাকা সব ভর আপনাকে সমানভাবে চারদিক থেকে টানবে। ফলে পৃথিবীর কেন্দ্রে আপনি কোনো নির্দিষ্ট দিকে টান অনুভব করবেন না—কারণ সবদিক থেকে টান সমান হওয়ায় তাদের প্রভাব একে অপরকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেয়।
এই চমৎকার ঘটনাটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় “শেল থিওরেম” বা “খোলস উপপাদ্য” দিয়ে। এই উপপাদ্য অনুযায়ী, একটি নিখুঁত গোলকের (যেমন পৃথিবীর) অভ্যন্তরে থাকা কোনো বস্তু সেই গোলকের বাইরের অংশ দ্বারা কোনো মহাকর্ষ বল অনুভব করে না। বরং কেবলমাত্র তার অবস্থানের কেন্দ্র থেকে যতদূর অবধি ভর রয়েছে, কেবল সেই অংশই তার ওপর মহাকর্ষ বল প্রয়োগ করে। আর সেই বলের মান সরাসরি সেই ভরের পরিমাণ ও কেন্দ্র থেকে দূরত্বের ওপর নির্ভর করে।
অর্থাৎ, আপনি যত গভীরে নামবেন, আপনার নিচের ভরের পরিমাণ (বা কার্যকর ভর) কমে যাবে, কারণ আপনি গোলকের কেন্দরের দিকে যাচ্ছেন এবং বাইরের ভরের প্রভাব আপনি অনুভব করবেন না। অন্যদিকে, ওপরে থাকা ভরের টানও বাড়তে থাকবে, কিন্তু সেটিও কার্যত সমান হারে অপরদিকের টান দিয়ে বাতিল হয়ে যাবে।
শেষ পর্যন্ত, যখন আপনি একদম পৃথিবীর কেন্দ্রে পৌঁছান, তখন আপনার চারপাশে থাকা প্রতিটি ভরের অংশ আপনাকে সমান টানে। ডানে থাকা কণা যতোটা টানবে, বাঁ পাশের কণাটিও ঠিক ততটাই টানবে। সামনে-পেছনেও একই বিষয় ঘটে। সব মিলিয়ে, আপনাকে টানার জন্য পৃথিবীর ভরগুলো একে অপরকে নিঃশেষ করে দেয়। ফলে, আপনার ওপর পৃথিবীর মোট মহাকর্ষীয় বল হয় শূন্য।
গ্র্যাভিটেশনাল অ্যাকসিলারেশন (g)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী:
F = m × g
এখানে, g হলো প্রতি একক ভরের ওপর প্রযুক্ত মহাকর্ষ বল। যদি বল (F) শূন্য হয়ে যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই g-এর মানও শূন্য হবে।
তাত্ত্বিকভাবে যদি আপনি পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন (যদিও বাস্তবে তা এখনো অসম্ভব), তাহলে আপনি এমন একটি অবস্থায় থাকবেন যেখানে কোনো অভিকর্ষ বল কাজ করছে না। আপনি হবেন ভরহীন এক অবস্থায়—একটি “ওজনহীন” পরিস্থিতি, যেমনটা আমরা মহাশূন্যে দেখতে পাই।
এই কারণেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবেই বলেন, পৃথিবীর কেন্দ্রে গেলে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান হবে শূন্য। এটি শুধুই কোনো অনুমান নয়, বরং বিজ্ঞানভিত্তিক সুপ্রতিষ্ঠিত একটি সত্য।
বাংলাদেশের ফুটবল সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত করার লক্ষ্য নিয়ে বিডিলীগ ডটকম আয়োজন করতে যাচ্ছে…
কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন কিংবা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে চার্জার একটি অপরিহার্য সরঞ্জাম। আমরা যেমন…
সম্প্রতি গুগল তাদের Google Phone App-এ বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে ডায়ালপ্যাড, হোমপেজ ও…
বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যসংস্কৃতিতে মাছ ও মাংসের গুরুত্ব অপরিসীম। ভাতের সঙ্গে মাছ কিংবা মাংস – দুইটিই…
নিশ্ছিদ্র অবরোধে জর্জরিত গাজায় একরাশ রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। শুক্রবার (২৫ জুলাই) দিনভর চালানো…
সাম্প্রতিক এক যুগান্তকারী আবিষ্কারে সৌরজগতের প্রায় শেষ প্রান্তে, প্লুটোরও বহু দূরের এক রহস্যঘেরা অঞ্চলে, নতুন…