
বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের শাখারিয়া গ্রামে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এক স্কুলছাত্রী ও এক গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে পৃথক দুটি ঘটনায় তারা আত্মহত্যা করেন। পুলিশ রাতেই লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয় এবং বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতরা হলেন—নাদিয়া আক্তার (১৪) ও জান্নাতুল ফেরদৌসি (২৫)। নাদিয়া শাখারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আর জান্নাতুল ফেরদৌসি দুই সন্তানের জননী ও স্থানীয় সোহেল হাওলাদারের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে মেয়ে নাদিয়াকে বাড়িতে রেখে মাঠে কাজে যান তার মা রাহিমা বেগম। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মেয়েকে ঝুলতে দেখেন। মেয়ের এ অবস্থায় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং দ্রুত ওড়না কেটে তাকে নিচে নামান।
নাদিয়ার মা রাহিমা বেগম বলেন, ‘কেন আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, তা আমি জানি না। সে কোনো সমস্যায় ছিল কি না, তাও বুঝতে পারিনি।’
প্রতিবেশীরা জানান, নাদিয়া পড়াশোনায় মেধাবী ছিল। তবে সম্প্রতি সে কিছুটা চুপচাপ থাকত। আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একই গ্রামে মঙ্গলবার বিকেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জান্নাতুল ফেরদৌসি। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি কিছুদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে আত্মহত্যার পেছনে পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জান্নাতুল ফেরদৌসির বড় ভাই রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ‘খবর পেয়ে বোনের বাড়িতে ছুটে আসি। এসে শুনি, সে গলায় ফাঁস দিয়েছে। কী কারণে এমনটা করল, তা বুঝতে পারছি না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
অন্যদিকে, জান্নাতুলের দেবর সাকিল হাওলাদার বলেন, ‘ভাবি কিছুদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। হয়তো সেই কারণেই আত্মহত্যা করেছেন।’
আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই দুই মৃত্যুর ঘটনায় আমতলী থানায় দুটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর যদি অন্য কোনো কারণ পাওয়া যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, একই গ্রামে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি আত্মহত্যার ঘটনা এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে। আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক বা মানসিক চাপ আত্মহত্যার কারণ হতে পারে। সচেতনতা ও মানসিক সহায়তা বাড়ালে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।