
রিয়াল মাদ্রিদ ৩ : ১ ম্যানচেস্টার সিটি
(দুই লেগ মিলিয়ে রিয়ালের জয় ৬-৩ গোলে)
চ্যাম্পিয়নস লিগের উত্তেজনার অন্যতম বড় মঞ্চ সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। এই মাঠেই বুধবার রাতে ফুটবলপ্রেমীরা সাক্ষী হলেন এক মহাকাব্যিক লড়াইয়ের, যেখানে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব আরও একবার প্রমাণ করল।
দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ গোলের বিশাল ব্যবধানে ম্যানচেস্টার সিটিকে পরাস্ত করে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা আরও একধাপ এগিয়ে গেল ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার পথে। তবে ম্যাচের আগে পেপ গার্দিওলা রিয়ালকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রথমে নিজের দলের জয়ের সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ বলে মন্তব্য করলেও পরে সেই কথা থেকে কিছুটা সরে আসেন। কিন্তু ম্যাচের ফলাফলে প্রমাণ হলো, রিয়ালের সামনে গার্দিওলার সেই ১ শতাংশ সম্ভাবনাও একেবারে শূন্যতে নেমে এসেছে।
ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রিয়ালের গোল উৎসবের সূচনা হয়। নিজেদের অর্ধ থেকে রাউল আসেনসিওর বাড়ানো বল পেয়ে যান কিলিয়ান এমবাপ্পে। তার সামনে তখন শুধু সিটির দুই ডিফেন্ডার। কিন্তু দুর্দান্ত গতি আর নিখুঁত নিয়ন্ত্রণে তাদের পাশ কাটিয়ে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে গোলরক্ষক এদেরসনের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন এমবাপ্পে। এই গোলে দুই লেগ মিলিয়ে রিয়াল এগিয়ে যায় ৪-২ ব্যবধানে।
সিটির দুর্ভাগ্য এখানেই শেষ হয়নি। ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ডিফেন্ডার জন স্টোনস। এই সময়টায় ম্যানচেস্টার সিটি যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। রিয়াল বারবার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু সিটি যেন তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছিল না।
এরই মধ্যে ৩৩ মিনিটে আবারও রিয়াল শিবিরে উল্লাস। এবারও সেই কিলিয়ান এমবাপ্পে! রদ্রিগো, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, জুড বেলিংহামের দুর্দান্ত পাসিংয়ে সাজানো আক্রমণের শেষ বলটি পান এমবাপ্পে, আর তা থেকে অনায়াসে গোল করে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন এই ফরাসি তারকা। প্রথমার্ধেই ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় রিয়াল।
বিরতির পরও ম্যাচের চিত্র পাল্টায়নি। রিয়াল মাদ্রিদ আরও নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে। সিটি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও রিয়ালের শক্তিশালী রক্ষণভাগ তাদের সব আক্রমণ নস্যাৎ করে দেয়।
৬১ মিনিটে রিয়ালের হয়ে ম্যাচের তৃতীয় গোলটি করেন সেই এমবাপ্পে। লুকা মদ্রিচের নিখুঁত পাস থেকে দুর্দান্ত শটে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। এই গোলের পর রিয়ালের সমর্থকদের মধ্যে বিজয়ের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। দুই লেগ মিলিয়ে তখন রিয়াল ৬-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
বাকি সময়টা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। রিয়ালের এই লিড নেওয়ার পর ম্যাচে উত্তেজনা আর থাকেনি। শেষ মুহূর্তে সিটির হয়ে নিকো গঞ্জালেস একটি সান্ত্বনাসূচক গোল শোধ করেন, তবে সেটি ছিল শুধুই ব্যবধান কমানোর জন্য।
এই জয়ে রিয়াল মাদ্রিদ প্রমাণ করল কেন তারা ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল। কিলিয়ান এমবাপ্পের অনবদ্য হ্যাটট্রিক আর গোটা দলের অসাধারণ পারফরম্যান্সে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ঐতিহ্য রক্ষা করল তারা। অন্যদিকে, পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি আবারও ইউরোপিয়ান আসরে ব্যর্থতার সাক্ষী হলো।
রিয়ালের এই জয়ে প্লে-অফের দেয়াল টপকে তারা পৌঁছে গেল চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী ধাপে, যেখানে তাদের সামনে অপেক্ষা করছে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, এই হার সিটির জন্য এক হতাশাজনক মৌসুমের ইঙ্গিত বহন করছে।