
রিয়াল মাদ্রিদ ১ – ১ অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ
লা লিগার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ মাদ্রিদ ডার্বি। রিয়াল মাদ্রিদ বনাম অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের এই লড়াই শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরেও। এবারের ডার্বির আগে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, যা ম্যাচেও স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে। একদিকে রিয়াল মাদ্রিদের আগের ম্যাচে এস্পানিওলের কাছে পরাজয় ও রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন, অন্যদিকে লা লিগা প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাসের ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য—সবমিলিয়ে ম্যাচের আগে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ডার্বির আগেই রিয়াল মাদ্রিদ অভিযোগ তুলেছিল যে, লা লিগার রেফারিং তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তেবাস বিদ্রুপের সুরে বলেন, “রিয়াল সবসময়ই রেফারিদের নিয়ে অভিযোগ তোলে, যখনই তারা ম্যাচ হারে।” এই মন্তব্যে আরও আগুন ধরে যায় বিতর্কে। রিয়াল মাদ্রিদ পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জানায়, তারা সঠিক সিদ্ধান্তের দাবিতেই প্রশ্ন তুলেছে। এরপর অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদও রেফারিদের সমর্থনে বিবৃতি দেয়, যা দুই ক্লাবের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
ম্যাচের প্রথমার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ বল দখলে এগিয়ে থাকলেও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের রক্ষণ ভাঙা ছিল কঠিন কাজ। নিজেদের লো-ব্লক ডিফেন্সের জন্য পরিচিত অ্যাতলেটিকো এই ম্যাচেও জমাট রক্ষণ কৌশল নিয়েই নামে। প্রথমার্ধে রিয়াল কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোলের দেখা পায়নি।
ম্যাচের ৩১তম মিনিটে ঘটে বিতর্কের বড় মুহূর্ত। ডি-বক্সের বাঁ দিক থেকে আসা একটি ক্রসে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পা বাড়ান অ্যাতলেটিকোর সামুয়েল লিনো, একই সময়ে বল ক্লিয়ার করতে পা বাড়ান রিয়ালের চুয়ামেনি। চুয়ামেনির পা লিনোর পায়ের ওপর পড়ে, তবে তার আগেই বল দুজনের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমে রেফারি পেনাল্টির আবেদন নাকচ করলেও ভিএআর দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান এবং অ্যাতলেটিকোকে পেনাল্টি দেন।
স্পটকিক থেকে বল জালে পাঠান হুলিয়ান আলভারেজ, ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। প্রথমার্ধে লিনো ও আলভারেজ আরও কয়েকটি ভালো সুযোগ পেলেও গোল বাড়াতে ব্যর্থ হন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আগ্রাসী হয়ে খেলতে শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদ। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও রদ্রিগো দুই উইং দিয়ে আক্রমণের ঝড় তোলেন। এর ফল আসে ৫০তম মিনিটে। রদ্রিগোর দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ের পর তার ক্রস জুড বেলিংহ্যাম ফার্স্ট-টাইম শট নেন, যা অ্যাতলেটিকোর ডিফেন্ডার হিমেনেজ ঠেকিয়ে দেন। তবে ফিরতি বলে দুর্দান্ত শটে গোল করেন কিলিয়ান এমবাপে, সমতায় ফেরে রিয়াল মাদ্রিদ।
এরপরও একাধিকবার অ্যাতলেটিকোর গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক রিয়ালের আক্রমণ প্রতিহত করেন। ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, এমবাপে ও বেলিংহ্যাম সবাই তাকে পরাস্ত করার চেষ্টা করলেও সফল হননি। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দুই দল গোলের জন্য লড়াই চালিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলের সমতায় ম্যাচ শেষ হয়।
এই ড্রয়ের ফলে সবচেয়ে বড় সুবিধা পেয়েছে বার্সেলোনা। লা লিগার শিরোপা দৌড়ে তারা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও রিয়াল ও অ্যাতলেটিকোর পয়েন্ট ভাগাভাগির কারণে তারা আবারও প্রতিযোগিতায় ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে, ঘরের মাঠে ২১ ম্যাচের মধ্যে ১৯ ম্যাচ জেতা রিয়াল মাদ্রিদ হয়তো এই ড্রয়ে হতাশ হবে, তবে তারা শেষ পর্যন্ত ম্যাচ থেকে একটি পয়েন্ট আদায় করতে পেরেছে।
মাদ্রিদ ডার্বি আবারও প্রমাণ করলো কেন এই ম্যাচ স্প্যানিশ ফুটবলের অন্যতম আকর্ষণীয় লড়াই। উত্তেজনা, বিতর্ক, নাটকীয়তা—সবকিছুই ছিল ম্যাচজুড়ে। তবে শেষ হাসি কে হাসবে, তা জানতে লা লিগার বাকি ম্যাচগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।