
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্ভাব্য রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে দলে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এই জোটের বিরোধিতা করে দলের ৩০ জন কেন্দ্রীয় নেতা দলীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে একটি লিখিত আপত্তিপত্র দিয়েছেন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) পাঠানো ওই চিঠিতে তারা এই জোট উদ্যোগকে কেন্দ্র করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী নেতারা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা এনসিপির ঘোষিত আদর্শ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন,
“জামায়াতসহ আট দলের সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতার বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় ২১৪ জন সদস্যের মধ্যে ১৮৪ জন মত দিয়েছেন। তবে ৩০ জন সদস্য লিখিতভাবে তাদের আপত্তি জানিয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রশ্নে আপত্তি
চিঠিতে ৩০ নেতা উল্লেখ করেন,
“রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা এবং সে সময় সংঘটিত অপরাধসমূহের দায় প্রশ্নে দলটির অবস্থান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও এনসিপির মূল মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।”
তারা আরও বলেন,
“জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির বিভাজনমূলক রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে। এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি, স্যাবোটাজ, এনসিপির ওপর অপকর্মের দায় চাপানোর অপচেষ্টা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) ও পরবর্তীতে ছাত্রশক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”
চিঠিতে আরও বলা হয়,
“অনলাইনে এনসিপি ও আমাদের ছাত্রসংগঠনের নারী সদস্যদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত চরিত্রহনন, ধর্মকে ব্যবহার করে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের চেষ্টা দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ অশনিসংকেত।”
এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সঙ্গে যেকোনো ধরনের জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং দলের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আপত্তিপত্রে নেতারা স্মরণ করিয়ে দেন,
“দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় মাত্র কয়েকটি আসনের জন্য জোটে যাওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।”
তারা জামায়াতের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতায় না যাওয়ার বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান প্রত্যাশা করেন।
কারা স্বাক্ষর করেছেন
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ,
যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন,
কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন,
যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম,
যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মো. মুরসালীন
এবং সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনীসহ আরও অনেকে।
তাসনিম জারার স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা, পদত্যাগের গুঞ্জন
এদিকে এনসিপির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মধ্যেই দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে এনসিপি থেকে তার পদত্যাগের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।











