
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল একই ভোট বাক্সে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনায় নির্বাচনী সমঝোতার ছক প্রায় চূড়ান্ত করেছিল। আজ শনিবার এ বিষয়ে বড় ধরনের ঘোষণার প্রস্তুতিও ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার আলোচনায় যুক্ত হওয়ায় আসন বণ্টনের হিসাব আবার নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এনসিপি ও অন্য নতুন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু না হলে আজই আট দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসত। কিন্তু নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় জোট সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় দলগুলো আবার আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, জামায়াতে ইসলামী একাই সব আসন ছাড় দিতে রাজি নয়। প্রাথমিকভাবে জামায়াত যদি ৩০টি আসন ছাড় দেয়, সে ক্ষেত্রে এনসিপি তা মেনে নিতে পারে। তবে এই ৩০টি আসনে জামায়াতের অন্যান্য শরিক দলগুলোকেও কিছু ছাড় দিতে হতে পারে।
আট দলের ভেতরে আলোচনায় যুক্ত নেতারা জানান, জামায়াতসহ সব দলই চায় এনসিপি এই জোটে যুক্ত হোক। কারণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি জাতীয় রাজনীতিতে দ্রুত গুরুত্ব পাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, এনসিপির গুরুত্বও তত বাড়ছে।
তবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন—এই দুই দল যেহেতু জোটের বড় অংশীদার, তাই নতুন দলকে জায়গা দিতে হলে তাদেরই সবচেয়ে বেশি ছাড় দিতে হতে পারে। আলোচনায় উঠে এসেছে, সে ক্ষেত্রে জামায়াতকে ১২০ থেকে ১২৫টি আসন পর্যন্ত ছাড় দিতে হতে পারে।
এনসিপির ভেতরেও জোট রাজনীতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। জানা গেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় নির্বাচন ও জোট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় দলের অধিকাংশ নেতা জামায়াতের সঙ্গে জোট করার পক্ষে মত দিলেও একটি অংশ এর বিরোধিতা করে।
এ ছাড়া ওই বৈঠকে বিএনপির সঙ্গেও জোট করার প্রস্তাব উঠে আসে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এনসিপি সূত্র জানায়, তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের মাধ্যমে জোট গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায়।
এনসিপির দাবি অনুযায়ী, তারা জামায়াতের কাছে ৫০টি আসন চায়। একই সঙ্গে জামায়াতকে পাশে রেখেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় অন্তত ১৫টি আসনের দাবি তুলতে চায় দলটি।
আট দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিপিসহ নতুন দলগুলোর জোটে আসার সম্ভাবনায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হলেও জোট ভেঙে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আলোচনাগুলো দ্রুত শেষ হবে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ বলেন,
“একটু জটিলতা এসেছে—এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে আশা করছি, দলগুলোর পক্ষ থেকে ভালো সংবাদই আসবে। আমাদের আট দলের পক্ষ থেকে আজ শনিবার ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নতুন দল যুক্ত হওয়ার আলোচনায় নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আছে। আলোচনা লম্বা হলে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন,
“জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা এখনো চলমান। দ্রুতই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। আমাদের সঙ্গে বর্তমানে সাতটি দল রয়েছে, আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
আট দলের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এনসিপি আলোচনায় আসার আগেই শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টনের একটি কাঠামো অনেকখানি চূড়ান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী—
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: ৫০টি আসন
- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস: ১৫টি আসন
- খেলাফত মজলিস: ৮টি আসন
- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি: ২টি আসন
- জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা): ২টি আসন
নতুন দলগুলোর অন্তর্ভুক্তির কারণে এই সমীকরণে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।













