
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বরগুনার আমতলী উপজেলার পশুর হাটগুলোতে কোরবানির পশুর সরবরাহ বেড়েছে কয়েকগুণ। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, উপজেলার চাহিদার তুলনায় এবছর গবাদি পশুর সরবরাহ বেশি। তবে এমন আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির মাঝেও এক অস্বস্তিকর সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে—সড়কে চাঁদাবাজি। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও খামারিরা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবছর উপজেলার চাহিদা ৮ হাজার ৮১৩টি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর। অথচ বাজারে মজুত রয়েছে ৯ হাজার ৭০টি। এর মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার ৯১২টি গরু, ৫৯৫টি মহিষ এবং ২ হাজার ৫৬৩টি ছাগল। ফলে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৫৭টি পশু রয়েছে বাজারে।
স্থানীয় খামারিরা এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশুদের পরিচর্যায় বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছেন তারা, অনেকেই এরইমধ্যে গরু ও অন্যান্য পশু হাটে তুলেছেন বিক্রির জন্য।
খামারিদের মতে, বিগত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম কিছুটা কম। ছোট, মাঝারি ও বড় গরুতে গড়ে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমতলী গাজীপুর বন্দরের গরু ব্যবসায়ী আলহাজ মাহবুবুর রহমান হাওলাদার বলেন, “এ বছর অনেক বেশি গরু উঠেছে বাজারে। আমি ৫২টি কোরবানিযোগ্য গরু বিক্রি করেছি, কিন্তু লাভ খুবই কম। ২৭টি গরু ঢাকায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করেছি, কিন্তু ট্রাক রওনা করানোর আগেই শুনছি সড়কে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হতে পারে। আমরা আতঙ্কে আছি।”
যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নওগাঁ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর আমতলী হাটগুলো থেকে গরু কিনে থাকেন। কিন্তু এবছর অনেকেই চাঁদাবাজির ভয়ে আসতে চান না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নেত্রকোনা থেকে আগত ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, “গরু ট্রাকে তোলার পর পথে একাধিক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।” নওগাঁর ব্যবসায়ী গফুর মিয়া জানান, “এই অতিরিক্ত খরচ শেষ পর্যন্ত ক্রেতার কাঁধেই গিয়ে পড়ে, বাজারে গরুর দাম পড়ছে। কিন্তু আমাদের লাভ থাকছে না।”
আমতলীর হাটগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত গরু রয়েছে এবং ক্রেতাদের উপস্থিতিও বাড়ছে। পশ্চিম চুনাখালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, “৪০ হাজার টাকায় একটি ছোট গরু কিনেছি। গত বছরের তুলনায় এবছর দাম কিছুটা কম।”
জিমি এগ্রো ভেটের মালিক আবুল বাশার নয়ন মৃধা বলেন, “আমার খামারে ১৭টি কোরবানিযোগ্য গরু আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো আগেই খামার থেকেই বিক্রি হয়ে গেছে।”
অন্যদিকে খামারি জাহাঙ্গির বলেন, “আমার খামারের আটটি গরু বিক্রি করেছি। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও ঝুঁকি নিতে চাইনি।”
আমতলী গরুর হাটের ইজারাদার আলাউদ্দিন মৃধা জানান, “বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০টির বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, বিক্রি আরও বাড়বে।”
অন্যদিকে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, “বাজারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। জাল টাকার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি থাকবে। চাঁদাবাজি বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদেকুর রহমান জানান, “বাজার মনিটরিংয়ের জন্য দুটি টিম গঠন করা হয়েছে, যারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বাজার পরিস্থিতি তদারকি করছেন।”
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, “পশুর হাটে কড়া নজরদারি রয়েছে। কেউ সড়কে চাঁদা আদায় করতে পারবে না, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”